মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
ইডি হেফাজতে থাকলেও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাবার আসছে বাড়ি থেকে। কিন্তু তার পরেও মন্ত্রীর খাবার নিয়ে অতি সাবধানী কেন্দ্রীয় সংস্থা। তারা সেই খাবার পরীক্ষা করিয়ে তবেই তুলে দিচ্ছেন মন্ত্রীর পাতে। আর পরীক্ষা করাচ্ছেন মন্ত্রীর বাড়ির লোককে দিয়েই।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ঠিক এক সপ্তাহ আগে রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। যিনি বালু নামেও সমধিক পরিচিত। তবে গ্রেফতার করলেও ইডি তাঁকে হেফাজতে পায় মঙ্গলবার রাত থেকে। সেখানে গত ৪৮ ঘণ্টায় বাড়ির খাবারই খেয়েছেন মন্ত্রী। তবে সেই খাবার নিরাপদ কি না, তার পরীক্ষা নিজেদের খেয়ে দিতে হয়েছে মন্ত্রীর বাড়ির লোককে।
ইডি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের সামনেই মন্ত্রীর জন্য আনা খাবার খেয়ে দেখছেন মন্ত্রীর জন্য সিজিওতে খাবার নিয়ে আসা তাঁর বাড়ির লোক। তার পরে সেই খাবার যাচ্ছে সিজিওতে বন্দি মন্ত্রীর কাছে।
ডায়াবিটিসের রোগী মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি তাঁর। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করেন। ওষুধও খান। আদালতে সে কথা জানিয়েওছিলেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, চিকিৎসক তাঁকে প্রতি দিন ১০ হাজার পা হাঁটতে বলেছেন। মন্ত্রীর কথা শুনে বিচারক সেই সময় জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘তবে তো স্মার্ট ওয়াচ লাগবে।’’ পরে মন্ত্রী আচমকা আদালতের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাবধানী শুনিয়েছিল বিচারককেও। আদালতে যখন জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবার তাঁর জন্য বাড়ি থেকে খাবার পাঠানোর আর্জি জানায়, সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। তিনি জানিয়ে দেন, ইডি হেফাজতে থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয়ের জন্য বাড়ি থেকেই খাবার যাবে।
কোর্টের সেই নির্দেশ মেনেই দিনরাত নিয়ম করে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে খাবার পৌঁছচ্ছে সিজিওতে। ইডির দফতর সল্টলেকে। সল্টলেকেই মন্ত্রীর বাড়িও। ঠিক এক সপ্তাহ আগে, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (ক্যালেন্ডার মতে শুক্রবার, কারণ রাত তখন ২টো ৪০ মিনিট) এই বাড়ি থেকেই মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তবে ইডির হাতে গ্রেফতার হলেও মন্ত্রীর ইডি হেফাজত তখন শুরু হয়নি। মন্ত্রীকে হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে ইডির আবেদনের শুনানি চলার সময়েই মন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। বিচারক জানিয়ে দেন, মন্ত্রী সুস্থ হয়ে ফিরলে তবেই শুরু হবে ১০ দিনের ইডি হেফাজত। চার দিন পরে মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে সিজিওতে যান ইডির গোয়েন্দারা। তার পর থেকেই আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়ম করে দিনরাত মন্ত্রীর খাবার পৌঁছচ্ছে সিজিওতে।
তবে আদালতের নির্দেশ মানলেও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় ইডি। বাড়ির খাবার আনার প্রশ্নে তারা আগেও আদালতে বলেছিল মন্ত্রীর খাবারের দিকে নজর রাখবে ইডি। ডায়াবিটিস রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয়, ইডি হেফাজতেও সেই খাবারই দেওয়া হবে মন্ত্রীকে। পরে বাড়ি থেকে খাবার আসার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও মন্ত্রীর খাবার নিয়ে অতি সতর্ক ইডি। মন্ত্রীর কাছে পৌঁছনো একটি খাবারের দানাও পরীক্ষা না করে পৌঁছে দিতে নারাজ তারা। তাই মন্ত্রীর বাড়ি থেকে যাঁরা খাবার নিয়ে আসছেন, ইডির আধিকারিকেরা তাঁদেরই বলছেন খাবার খেয়ে দেখতে। আদালতেও ইডি বলেছিল, উনি কী খাবেন সেটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সেই পরীক্ষার কাজ বাড়ির লোকই করছে। ইডির সামনে সেই খাবার তাঁরা খেয়ে দেখার পরে খাবার পৌঁছচ্ছে মন্ত্রীর থালায়।