ডিএ নিয়ে ধর্মঘটে কঠোর নবান্ন। ফাইল চিত্র।
বর্ধিত হারে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের একাধিক সংগঠন। কিন্তু ওই দিন রাজ্যের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক রাখতে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল নবান্ন। বৃহস্পতিবার অর্থ দফতরের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে শুক্রবার কোনও সরকারি কর্মচারী ছুটি নিতে পারবেন না। স্কুল-কলেজ-সহ যাবতীয় সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠান ওই দিন পূর্ণ সময় খোলা থাকবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য কর্মচারীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকেন কিংবা কোনও কর্মচারী যদি আগাম ছুটি নিয়ে থাকেন, তবে তাঁর ছুটি মঞ্জুর হবে। অন্যথায় যদি কেউ বিনা অনুমতিতে শুক্রবার অনুপস্থিত থাকেন, তবে তাঁর বেতন কাটা যাবে তো হবেই, কর্মজীবনের মেয়াদও এক দিন কমবে। তা ছাড়া প্রতিটি দফতরের বিভাগীয় প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কোনও কর্মচারী এর পরেও গরহাজির থাকলে তাঁকে শো-কজ়ের চিঠি ধরাতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর উদ্দেশে প্রশ্ন করা হবে যে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে না? প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে তবেই ছুটি মঞ্জুর করা হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ যখন কর্মবিরতির পথে হেঁটেছিল, তখনও এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল নবান্ন।
সরকারি কর্মচারীদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি অবশ্য জানিয়েছে, রাজ্য সরকার যতই কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিক, ধর্মঘট হবেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ধর্মঘটকে সমর্থন করলেও জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “জেনে রাখা দরকার যে, আমরা আমাদের ধর্মঘট থেকে জরুরি পরিষেবাকে বাদ রেখেছি, তাই আমাদের দায়িত্ব স্মরণ না করালেও চলবে।” রাজ্য সরকার নিজেদের দায়িত্ব পালনে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রায় প্রতিটি কর্মচারী সংগঠন এই ধর্মঘটে শামিল হলেও অ্যাডিনোভাইরাসের বাড়বৃদ্ধির আবহে ‘মানবিক কারণে’ এর মধ্যে থাকছে না তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। সদস্যদের ধর্মঘট ব্যর্থ করে কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপাও। কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মচারী সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। সম্প্রতি সেই মঞ্চে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপির নেতাদের উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে শাসকদল তৃণমূলের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ৩ শতাংশ ডিএ বাড়ানো হয়েছে। এর বেশি তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। তাতে এখনও রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।