সিঙ্গুরের সেই জমিতেই জমে বর্ষার জল। ছবি: দীপঙ্কর দে
এক বছর আগে সামান্য জমিতে হলেও আলু ফলেছে। সর্ষে, ধান, ভুট্টাও হয়েছে।
এ বার এ জমির অনেক জায়গায় এখনও জমে বর্ষার জল। পুরোদস্তুর চাষ কবে শুরু করতে পারবেন, জানেনই না চাষিরা।
এলাকার নাম সিঙ্গুর। আর এ সেই ৯৯৭ একর জমি। টাটাদের জন্য জমি অধিগ্রহণ অবৈধ, ২০১৬ সালের অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট এই রায় ঘোষণার পরে যে জমিকে ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরত দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সেখানে এখন কোথায় চাষ?
সিঙ্গুরের সেই চাষিদের একাংশের ক্ষোভ, জমির বেশির ভাগটাই এখনও চাষের উপযোগী নয়। তাঁদের দাবি, অন্তত ৩০০ একরে এখনও বর্ষার জল জমে। যেখানে জল নেই, চাষিরা মাঠে না-নামায় সেখানে উলুখাগড়ার বন গজিয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার সিঙ্গুরে কৃষিমেলায় যান। তাঁকেও পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেখান চাষিরা।
খাসেরভেড়ির শ্যামাপদ কোলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘জমি চাষের উপযুক্ত হলে তো চাষ করব।” বাজেমিলিয়ার খগেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে নীচে থাকা বোল্ডার বেরিয়ে পড়েছে। কী করে ওখানে চাষ হবে?”
জমি হাতে পাওয়ার পরে ২০১৬ সালের শেষে চাষিরা পরীক্ষামূলক ভাবে চাষে নেমেছিলেন। বেড়াবেড়ির ৪০-৫০ একর জমিতে আলু, সর্ষে, ধান এবং ভুট্টা চাষ হয়েছিল। কিন্তু গত বর্ষার পরেই পাল্টে যায় ছবিটা।
গোপালনগরের সাহানাপাড়া, কোলেপাড়া এবং বেড়াবেড়ি লাগোয়া মনসাতলায় বিচ্ছিন্ন কিছু জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। বাকি জমিতে চাষ থমকে। চাষিদের জমি চিহ্নিত করে আল তৈরি করে দিয়েছিল প্রশাসন। বর্ষায় তা ধুয়েমুছে যাওয়ায় সব জমি এখন মিলেমিশে গিয়েছে। তা ছাড়া, জমা জল বের করার জন্য তৈরি কালভার্টের গঠনগত ত্রুটির জন্য জমা জল নামছে না, এই অভিযোগও উঠছে।
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘জমি চিহ্নিত করা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। তা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘ওখানে অন্তত সাড়ে তিন হাজার প্লট রয়েছে। চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতে এ মাসের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে জমি বুঝে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ ভূমি দফতরে কেউ যাননি।’’ চাষিদের পাল্টা প্রশ্ন, নিজের যে জমি চেনাই যাচ্ছে না, তার জন্য কী ভাবে আবেদন করব?
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই পরিস্থিতি কাজে লাগাতে ময়দানে নেমেছে সিপিএম। সিঙ্গুর ব্লক কৃষকসভার সভাপতি পাঁচকড়ি দাস বলেন, “যত দিন না জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হবে, আমরা আন্দোলন করব।’’ শাসক দলের পক্ষে বেচারাম মান্না বা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে, বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘জমি সমান করার ৩০% কাজ এখনও বাকি। প্রশাসনকে প্রস্তাব দিয়েছি, গাড়ি এবং লোক দিলে বকেয়া কাজ আমরা শেষ করব।’’