প্রতীকী ছবি।
শহর হোক আলো ঝলমলে। খেলাধুলার জায়গা বাড়ুক আরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে রাজ্যের ১২৭টি পুরসভায়। অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত চতুর্থ রাজ্য অর্থ কমিশন নবান্নে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এ রাজ্যের পুরসভাগুলিতে এখন প্রতি কিলোমিটারে ২৪.৬৬ বা ২৫টি করে আলো লাগানো হয়েছে। অধিকাংশ পুর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আলোর মধ্যে ত্রিফলাই বেশি। তবে হাইমাস্ট আলোর সংখ্যাও কম নয়! এ ছাড়া, প্রতিটি পুরসভায় গড়ে ৩৫ হাজার ৩২০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে পার্ক তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
আলো-পার্কের ছড়াছড়ি হলেও অর্থ কমিশনের রিপোর্ট জানাচ্ছে, পরিষেবার চারটি বিশেষ ক্ষেত্র— রাস্তা, জল সরবরাহ, নিকাশি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পুরসভাগুলিকে এখনও অনেক পথ পেরোতে হবে। সেই কারণে কমিশন পাঁচ বছরের জন্য পুরসভাগুলিকে ২৯৮৩.৪৩ কোটি টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা পুরসভাগুলি এবং পুর দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিলাম। ২০১৫ সালে আসা রিপোর্ট থেকেই তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে।’’
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘নিকাশি, জল সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অজস্র প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, ১০৩টি পুরসভায় জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সব চেয়ে বড় সমস্যা এক লপ্তে জমি পাওয়া। উত্তরপাড়া-বৈদ্যবাটি ঘরোয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম জমিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে। অন্য পুরসভাগুলিতেও তা অনুসরণ করা হবে।
কমিশনের রিপোর্ট জানাচ্ছে, এ রাজ্যে সবচেয়ে কম জনবসতির পুরসভা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের খরার। ১২ হাজার ২২০ জন বাসিন্দার জন্য রাস্তা রয়েছে ৭৫ কিমি। আর আলো ৬৫৫টি। অন্য দিকে কলকাতা পুর এলাকায় আলোর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩৪৪। যা রাজ্যের মধ্যে সব চেয়ে বেশি।
কমিশন বলেছে, পুরসভাগুলির জনপিছু দিনে ১৩৫ লিটার জল দেওয়ার কথা। কিন্তু বহু পুরসভায় গড়ে দিনে ৬-৭ ঘণ্টার বেশি জল সরবরাহ হয় না। শুধু তাই নয়, কুপার্স ক্যাম্প, নলহাটি, পাঁশকুড়া, কুলটি, জয়নগরের মতো পুরসভায় জল সরবরাহের ব্যবস্থাই নেই। শুধু কলকাতা পুরসভা জনপ্রতি ১৩৫ লিটার জল দিতে পারে। দিনে জনপিছু ১০ লিটার জল দেওয়ার ক্ষমতাও অর্ধেক পুরসভার নেই বলে জানিয়েছে কমিশন।
নিকাশি পরিস্থিতিও তথৈবচ। মাত্র ২৮টি পুরসভা দাবি করেছে তাদের নিকাশির ব্যবস্থা রয়েছে। কমিশন লিখেছে, মাত্র ২৪.৪% পুর এলাকায় ঢাকা নর্দমা আছে, খোলা নর্দমা আছে ৪২.৪% এলাকায় এবং ৩৩.২% এলাকায় কোনও নর্দমাই নেই!
প্রায় একই অবস্থা জঞ্জাল সাফাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও। আসানসোল, অশোকনগর, বীরনগর, কুপার্স ক্যাম্প, ধূপগুড়ি, কান্দি, ক্ষীরপাই, পাঁশকুড়া, পূজালি, পুরুলিয়া এবং রামপুরহাটের মতো পুরসভায় জঞ্জাল বহন করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাই নেই। ২৮টি পুরসভার ক্ষেত্রে জঞ্জাল সংগ্রহ করার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আর মাত্র ১০% পুরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়।
আর রাস্তার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কমিশন জানিয়েছে, দুর্গাপুর, কল্যাণী এবং বিধাননগর ছাড়া পুর এলাকার রাস্তা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এমনকি কলকাতার রাস্তাও প্রয়োজনের তুলনায় সঙ্কীর্ণ।