—ফাইল চিত্র।
উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে আসানসোলে। স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের বাগ্যুদ্ধ আরও তীব্র হল রবিবার। নাম না করে টুইটারে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে তীব্র আক্রমণ করলেন বাবুল সুপ্রিয়। আর বাবুলকে পাল্টা আক্রমণ করে জিতেন্দ্র প্রশ্ন, ‘‘শুধু টুইটারে, ফেসবুকে আর ফোনে কেন কথা বলছেন উনি? সামনে কেন আসছেন না?’’ ১৫ দিনের মধ্যে বাবুল সুপ্রিয়র বাড়ির সামনের মাঠে জনসভা করে সব আক্রমণের জবাব দেওয়ার কথাও এ দিন ঘোষণা করেছেন আসানসোলের মেয়র।
ভোট মিটলেও আসানসোলে মেটেনি রাজনৈতিক তিক্ততা। ওই আসন থেকে দ্বিতীয় বার জেতা বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং মেয়র তথা জেলা তৃণমূলের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি পরস্পরকে ক্রমাগত আক্রমণ করেই চলেছেন।
শনিবার তিওয়ারি বাবুলের নামে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেন। নিজের অভিযোগপত্রে একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে একজন তাঁকে ফোন করে বাবুল সুপ্রিয় হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এবং আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেছেন— এমনই অভিযোগ করেন আসানসোলের মেয়র।
বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য কোনও রাখঢাক করেননি। ওই অভিযোগের কথা জানতে পারার পরে বাবুল নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, জল্পনার কোনও কারণ নেই, মেয়রকে তাঁর নাম করে কেউ ফোন করেননি, তিনি নিজেই করেছেন। তবে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারের যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে জিতেন্দ্র তুলেছিলেন, তা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেন বাবুল। গুন্ডামি বন্ধ করতে বলাকে বা মেয়রের পদটার মর্যাদা রক্ষা করার কথা বলাকে আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে জিতেন্দ্র তিওয়ারির— এ ভাবেই কটাক্ষ ছুড়ে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে এ বার ফেসবুকে তোপ মমতার
জিতেন্দ্র তিওয়ারিও থেমে থাকেননি। বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলে ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না, দূর থেকে নানা মন্তব্য করছেন— বলেন জিতেন্দ্র। বাবুল সুপ্রিয় যে স্কুলের ছাত্র, তিনি সেই স্কুলের হেডমাস্টার— এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
রবিবার ফের সে কথার জবাব দিয়েছেন বাবুল। তিনি বলেছেন, ‘‘আসানসোলে আসলে গুন্ডামি-মস্তানির স্কুল চালাচ্ছে তৃণমূল। সেই স্কুলের ছাত্র বা হেডমাস্টার, কোনওটা হওয়ার ইচ্ছাই আমার নেই। আমার লক্ষ্য এই গুন্ডামির স্কুলটা বন্ধ করে দেওয়া এবং সেটা আমি করেই ছাড়ব।’’
এতেই থামেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকেও আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। বাবুল টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আসানসোলকে দূষণমুক্ত করতে ও অভব্য, জনবিরোধী টিএমছিঃ গুন্ডা, মাফিয়া, অমানুষগুলিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে এসে যাতে আসানসোলের নোংরা তৃণমূলী রাজনীতির ‘পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ করতে পারি, সেই জন্যই তো এই মন্ত্রকটি আমাকে দেওয়া হয়েছে।’’ টুইটারে বাবুলের খোঁচা, ‘‘বোকা তৃণমূলীগুলো এটুকুও বোঝে না। বাচ্চা ছেলের মতো পুলিশের কাছে কান্নাকাটি করে।’’
আরও পড়ুন: এলাকায় ঢুকতে বাধা, তৃণমূল বিধায়ককে আটকে দিনভর বিক্ষোভ, উত্তপ্ত খেজুরি
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই টুইটেই শেষ হয়নি রবিবারের আখ্যান। আবার পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন মেয়র। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয়র সব কথার জবাব আমি দেব এবং আসানসোলের মাটিতে দাঁড়িয়েই দেব। ওঁর মতো ফেসবুক-টুইটার-ফোনে দেব না।’’ কী ভাবে জবাব দেবেন তা হলে? জিতেন্দ্র তিওয়ারির ঘোষণা, ‘‘আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়র যে বাড়ি রয়েছে, তার সামনের মাঠে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জনসভা করব। ওই মাঠে দাঁড়িয়েই প্রত্যেকটা কথার জবাব দেব।’’ বাবুলকে জিতেন্দ্রর চ্যালেঞ্জ, ‘‘কোনও একটা রবিবার দেখেই ওই সভাটা করব, যাতে বাবুল সুপ্রিয় বাড়িতে থাকতে পারেন। অন্য কোনও দিনে করলে উনি বলবেন, পার্লামেন্টে ছিলাম, তাই আসানসোলে থাকতে পারিনি। তাই ওঁর ছুটির দিন দেখেই সভা করব। যাতে বাড়িতে থেকে উনি শুনতে পারেন, আমরা কী বলছি।’’
আরও পড়ুন: বীজপুরেও নেতাদের পথে ‘জয় শ্রীরাম’
জিতেন্দ্র তিওয়ারির এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ওঁদের বলেছি মানুষের কাজে সহযোগিতা করতে এবং শিষ্ট ভাষা ব্যবহার করতে। এর পরে যাঁর যেমন শিক্ষা-দীক্ষা, তিনি এমনই আচরণ করবেন।’’ বাবুল আরও বলেন, ‘‘মানুষের কাজে সহযোগিতা না করলে কী হয়, আসানসোলে ২ লক্ষ ভোটে হারার পরেও যদি ওঁরা তা বুঝতে না পারেন, তা হলে আর কোনও ভাবেই বুঝবেন না। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাই না।’’
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)