মাঠে-ময়দানে শাসক-বিরোধীর যে লড়াই হয়, প্রায় সেরকম ঘটনাই ঘটল বিধানসভা কক্ষের ভিতরে। মন্ত্রী ও বিরোধী দলের বিধায়কেরা একে অপরের দিকে তেড়ে গেলেন আস্তিন গুটিয়ে। বৃহস্পতিবার যুযুধান দু’পক্ষের এই তরজার সূত্রপাত মুর্শিদাবাদের বাস দুর্ঘটনা নিয়ে।
রাজ্যপালের বক্তৃতার উপর বিতর্কে বারবারই মুর্শিদাবাদের বাস দুর্ঘটনা নিয়ে শাসক-বিরোধী একে অপরকে দুষছিলেন। হঠাৎই শোরগোল বাধে সরকারপক্ষের উপ-মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের মন্তব্যে। এই দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজ দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তাপসবাবু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, বুধবার দলীয় বৈঠকে কংগ্রেসের নাম না করে এই মন্তব্যই করেছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দলের নেতা এ বার বিধানসভায় একই ভাবে আক্রমণ করায় ওই মন্তব্য সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে চিৎকার শুরু করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন আবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনের দিকে এগিয়ে যান।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎই গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার মনোজবাবুকে তুই-তোকারি করে বসতে বলেন। যা শুনেই মানসের দিকে তেড়ে যান মনোজবাবু। মানসের পাশে থাকা তৃণমূল বিধায়কেরা তখন দু’জনকেই নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কংগ্রেস বিধায়কদের অধিকাংশই তখন ওয়েলে। তবে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা অপূর্ব সরকার, শঙ্কর মালাকাররা চুপচাপ নিজের আসনে বসেছিলেন। এঁরা তিনজনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বলে কংগ্রেস অন্দরেই গুঞ্জন রয়েছে। মনোজ-মানসের চাপানউতোরের মধ্যে আচমকাই একেবারে উল্টো দিকে থাকা পরিবরণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী পাঞ্জাবির আস্তিন গুটিয়ে ওয়েলে নেমে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘ওঁরাই কি শুধুমাত্র মস্তান!’’
পরিবহণমন্ত্রীর পিছুপিছু শাসক দলের বেশ কিছু বিধায়ক তখন ওয়েলে নেমে পড়েছেন। দু’পক্ষের হাতাহাতির উপক্রম তখন। কোনওমতে দু’পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করেন সতীর্থরাই। হট্টগোলের মধ্যে শুভেন্দু উত্তেজিত ভাবে দু’হাত তুলে কিছু বলতে থাকেন। কংগ্রেস, তৃণমূলের এই ধস্তাধস্তির সময়ে অবশ্য বামেরা ‘দূরে’ই ছিল।
পরিস্থিতি শান্ত হলে শুরু হয় রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে বিতর্ক। তৃণমূলের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘বিধানসভায় একে অপরের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন, এই আচরণ ঠিক নয়।’’ তবে যাঁর মন্তব্য ঘিরে এত কাণ্ড, সেই তাপসবাবু কিন্তু নিজের বক্তব্যে অনড়। তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অপ্রাঙ্গসিক হলে আমি দেখে ব্যবস্থা নেব।’’ কিছুক্ষণ পরে মানস অবশ্য কক্ষের মধ্যেই মনোজবাবুর কাছে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। মন্ত্রী শুভেন্দু অবশ্য পরে আর কোনও মন্তব্য করেননি।