সবুজ সঙ্কেত মিলেছে অর্থ দফতরের। পরিবহণের নিগমগুলিতে আবার স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। নবান্ন সূত্রের খবর, এ বার ৭৯০ জন কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। এতে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই জানিয়েছিলেন, রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিকে ভর্তুকি-মুক্ত করা হবে। সেই সময়ে নিগমগুলিতে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতো সরকারকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই দু’দফার স্বেচ্ছাবসরের ফলে তা কমে দাঁড়াবে ৪৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
ভর্তুকি কমাতে সরকার তিনটি পথ নিয়েছিল। ১) নিগমগুলির ব্যবসা বাড়ানো। ২) নিগমগুলির কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ কমানো। ৩) ডিপোর জমি বিক্রি করে নিগমগুলির আয় বাড়ানো। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ডিপোর জমি বিক্রি করে রাজ্য সরকার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছে। নিগমগুলিতে নতুন বাস কিনে চালিয়েও আয় বেড়েছে বলে দাবি পরিবহণ দফতরের।
২০১৫ সালে প্রথম দফায় প্রায় এক হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। তাতে ভর্তুকি কমেছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ বার ৭৯০ জন কর্মীর স্বেচ্ছাবসর হলে খরচের বোঝা আরও কমবে বলেই রাজ্য প্রশাসনের আশা। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বাস-প্রতি কর্মীর সংখ্যা ছিল ৭ থেকে ১৪। প্রথম দফার স্বেচ্ছাবসরের পরে তা দাঁড়িয়েছে ৫-৬ জন। দ্বিতীয় দফার পরে ওই সংখ্যা হবে ৪।’’
পরিবহণ দফতরের দাবি, সাধারণ ভাবে অসুস্থ, অশক্ত চালক-কন্ডাক্টরদেরই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘জোর করে কোনও কর্মীকেই স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে না। যাঁরা নিজে থেকে অবসর নিতে চাইবেন, তাঁদেরই দেওয়া হবে।’’
দু’দফায় স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ছাড়াও সাধারণ ভাবে বেশ কিছু কর্মীর অবসর হয়েছে। ফলে কমেছে চালক-কন্ডাক্টরের সংখ্যা। অথচ বাস বেড়েছে কয়েকশো। ঘাটতি মেটাতে শ’পাঁচেক অস্থায়ী চালক-কন্ডাক্টর নেওয়া হয়েছে। আরও নেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ-কর্তারা।
রাজ্য সরকারের এই নীতির সমালোচনা করছেন বিরোধী শ্রমিক সংগঠন সিটুর নেতা অনাদি সাহু। তাঁর কথায়, ‘‘শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়া সরকার এ-সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ, এর মধ্যে অস্বচ্ছতা রয়েছে।
কর্পোরেট কায়দায় মুনাফা করতে স্থায়ী শ্রমিক ছাঁটাই করে কম বেতনে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী হলে কি এই ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন!’’