—ফাইল চিত্র
গত কয়েক দিনের নীরবতা ভেঙে ‘আলাপিনী মহিলা সমিতি’ প্রসঙ্গে মুখ খুলল বিশ্বভারতী।
একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আলাপিনী সমিতির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলল বিশ্বভারতী কর্মী-পরিষদ। তাতে সমিতিকে এক সদস্যের ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ এবং সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতীর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে কর্মী-পরিষদ। বেশ কিছু দিন ধরেই আলাপিনী সমিতি নিয়ে আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের একটি অংশ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় সরব। তবে, এই ক্ষোভ বড় আকার ধারণ করে শুক্রবার, বছরের প্রথম দিনেই আলাপিনীর অধিবেশন কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায়। এর প্রতিবাদে সমিতির ষাটোর্ধ্ব
সদস্যারা মাটিতে বসে ঘণ্টা দুয়েক রবীন্দ্রসঙ্গীত সহযোগে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন।
এর পরেই এ দিন বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অভিযোগ করা হয়, “বর্তমানে আলাপিনী মহিলা সমিতি আর নেই, এই সমিতি জয়তী বসু মহিলা সমিতিতে পরিণত হয়েছে বহু বছর। জয়তী বসুর ব্যক্তিগত পছন্দে ও অপছন্দে ওই সমিতি বর্তমানে চালিত হয়।’’
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির সম্পাদিকা জয়তী ঘোষ বলেন, “জয়তী বসু নামে সমিতিতে কোনও সদস্যা নেই। যদি উক্ত ব্যক্তি আমি হই, সে ক্ষেত্রে বলতে পারি, এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। কোন কোন সদস্যার কাছ থেকে কর্মী পরিষদ এই তথ্য পেয়েছে, তা তারা জানাক।’’ যদিও ঘণ্টা তিনেক পরে জয়তিদেবীর ঠিক পদবি দিয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্বভারতী।
একই সঙ্গে পরিষদের দাবি, “আজকের এই সমিতির সদস্যারা যথেষ্ট স্বনির্ভর ও যথেষ্ট অর্থবান। যে ঘর তাঁরা এত দিন ভোগ করে আসছেন, তাঁরা সেই ঘরের চালটি কেন নিজেরা ছাইয়ে নিতে পারলেন না বা সে ঘরের ইলেকট্রিক বিল কেন তাঁরা দিতে পারেন না?” সমিতির সভানেত্রী অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “এর আগে কোনও উপাচার্য ভাড়া বা অর্থের প্রসঙ্গ তোলেননি। তবে, কর্তৃপক্ষ যদি এই ধরনের কোনও প্রস্তাব আগেই দিতেন, সে ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয় ভেবে দেখতাম।’’
সমিত্র সদস্যাদের কটাক্ষ করে বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, “আজকের এই সমিতির ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্ট স্বনির্ভর হলেও তাঁরা বিশ্বভারতীকে সাহায্য নয়, বিশ্বভারতীকে কী ভাবে নিজেদের জন্য শোষণ করা যায় ব্যবহার করা যায় তার কাজে ব্রতী। যেখানে কর্তব্য নয় আসলে শুধুই অধিকার রক্ষার লড়াই আসলে বড় হয়ে দাঁড়ায়।’’ এই পরিপ্রেক্ষিতে জয়তী ঘোষ বলেন, “প্রাক্তন উপাচার্যের দেওয়া ঘরে মাসে মাত্র চার ঘণ্টা বৈঠক করার অর্থ কী ভাবে শোষণ হয়, তা আমাদের জানা নেই।’’
কর্মী পরিষদের আরও অভিযোগ, “এঁরা এখন আশ্রমের কোনও কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন না। শুধুমাত্র শারদোৎসবে নিজেদের নাটক করা ছাড়া।’’ এর উত্তরে অপর্ণাদেবী বলেন, “আমরা কী কী করি, তার সম্পূর্ণ তালিকা উপাচার্যকে লিখে জানিয়েছিলাম, সেটা তিনি পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেননি। এ বছরের শুরুতেও পাঠভবন অধ্যক্ষার অনুরোধে ছাত্রনিবাসে গিয়েছেন সদস্যারা।’’
ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী উপাচার্য থাকাকালীন ওই ঘরটি আলাপিনী সমিতির হাতে তুলে দেন—এই তথ্য জয়তী ঘোষের ‘স্বরচিত’ বলে দাবি কর্মী পরিষদের। যদিও এই তথ্যকে ‘ঐতিহাসিক সত্য’ বলেই দাবি করেছেন সমিতির
সদস্যারা। একশো বছরের সংস্থাটির আজও কোনও নির্বাচন বা অডিট নেই কেন, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এর প্রেক্ষিতে সমিতির সদস্যারা বলেন, “জয়তীদেবী বহুবার পদ ছাড়তে চাইলেও, আমাদের জেদেই তাঁকে থাকতে হয়েছে।’’
অডিটের প্রশ্নে অপর্ণা দেবী বলেন, “আমাদের বাৎসরিক আয় ১০-১১ হাজার টাকা, তাই অডিটের ব্যবস্থা করা হয়নি।’’
কর্মী পরিষদের ঘোষণা, “আজ বিশ্বভারতী নিজ উদ্যোগে এই আলাপিনী মহিলা সমিতিকে তার সকল স্তরের মহিলা সদস্যদের নিয়ে, তার কর্মীদের আগ্রহী স্ত্রীদের, পরিবারের মহিলাদের নিয়ে নতুন করে সুসংগঠিত করার কথা ভাবছে বা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, যা এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী প্রশাসনের অত্যন্ত যথাযথ ও সঠিক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।’’
তবে, বর্তমান সদস্যাদের আশঙ্কা, তাঁদের সরিয়ে নতুন ‘আলাপিনী মহিলা সমিতি’ গঠন করতে চান বর্তমান উপাচার্য। সেই কাজ মসৃণ করতেই ব্যক্তি আক্রমণের পথে হাঁটছে বিশ্বভারতী। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে আজ, রবিবার সকালে মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার সামনে অবস্থানেরও ডাক দিয়েছেন সদস্যারা।