অতীত: ফেলোশিপের দাবিতে বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র
নন-নেট ফেলোশিপের বকেয়া মেটানোর দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন আন্দোলন হয়েছে বিশ্বভারতীতে। ওই দাবি নিয়ে এ বার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩১ মে-র মধ্যে ২০১৬-’১৭ এবং ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষের সমস্ত বকেয়া নন-নেট ফেলোশিপ মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিশ্বভারতীর তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত বকেয়া ফেলোশিপের টাকা মিটিয়ে ফেলা হবে। একই সঙ্গে ২০১৮-’১৯ ও ২০১৯-’২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া গবেষক ছাত্রছাত্রীদের লকডাউন- পরবর্তী সময়ে নন-নেট ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতেও বলা হয়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পর্যাপ্ত অর্থ এলেই এই দ্বিতীয় পর্যায়ের ফেলোশিপ দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
‘বিশ্বভারতী ডেমোক্রেটিক রিসার্চ স্কলারস অর্গানাইজ়েশন’ এই সিদ্ধান্তকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের জয় হিসেবেই দেখছে। ঘটনাচক্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগের দিনই সংগঠনের পক্ষ থেকে অনলাইন স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছে। তাতে তাদের দাবি ছিল, অবিলম্বে ২০১৮ ও ’১৯ সালে ভর্তি হওয়া গবেষকদের ফেলোশিপ চালু করতে হবে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ভর্তি হওয়া গবেষকদের অবিলম্বে সমস্ত বকেয়া ফেলোশিপ দিতে হবে এবং যে সমস্ত গবেষক নিয়মিত মাসিক ফেলোশিপ পাচ্ছিলেন, এই লকডাউনের পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই তা বন্ধ করা যাবে না।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে যাঁরা বিশ্বভারতীতে গবেষক হিসেবে ভর্তি হন, তাঁদের সময় থেকেই অসুবিধার সূত্রপাত। এই সময় ইউজিসি নন-নেট ফেলোশিপ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবাদে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হলে ইউজিসি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর গবেষকেরা কোনও রকম নন-নেট ফেলোশিপ পাননি। এই দু’বছরের বকেয়া টাকার এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু বাকিটা বকেয়াই থেকে যায়।
সূত্রের খবর, এই ফেলোশিপ নিয়ে ২০১৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর গবেষকেরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অনশনে বসেন। উপাচার্যকে লাইব্রেরির মধ্যে ঘেরাও করেন। পরে গবেষকদের প্রতিনিধি দল এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আলোচনায় ঠিক হয়, ২০১৮ সালে ভর্তি হওয়া গবেষকদের ফেলোশিপ চালু করা হবে এবং ২০১৯ সালের গবেষকদেরও ফেলোশিপ দেওয়া হবে। ২০১৬ ও ২০১৭-য় ভর্তি হওয়া গবেষকদের বকেয়া ফেলোশিপের আরও এক তৃতীয়াংশ দেওয়া হবে শীঘ্রই। এরপর বিশ্বভারতীর তরফ থেকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের এক-তৃতীয়াংশ বকেয়া ফেলোশিপ প্রদান করা হলেও ২০১৮ এবং ’১৯ সালে ভর্তি হওয়া গবেষকেরা ফেলোশিপ পাননি।
গবেষক সংগঠনের সদস্য তথা পদার্থবিদ্যার গবেষক অমিতকুমার মণ্ডল জানান, ২০১৮ সালে ভর্তি হওয়া গবেষকদের দীর্ঘ দুই বছর গবেষণার পরেও কোনও ফেলোশিপ চালু হয়নি। একই অবস্থা পরের বছর ভর্তি হওয়া গবেষকদের। তাঁরা মূলত গৃহশিক্ষকতা করে গবেষণার খরচ জোগাড় করতে বাধ্য হচ্ছেন। অমিতের বক্তব্য, ‘‘লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁদের নিজেদের খরচ জোগাড় করার সব মাধ্যমই এখন বন্ধ। ফলে অনেক গবেষকই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তাঁদের দুরবস্থার কথা মাথায় রেখেই শুক্রবার আমরা স্মারকলিপি জমা দিই। এর পরিপ্রেক্ষিতে
বিশ্বভারতীর এ দিনের সিদ্ধান্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের আংশিক জয় বলেই আমরা মনে করছি।’’ যতদিন না ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের নন-নেট ফেলোশিপ সম্পূর্ণ দেওয়া হচ্ছে, তত দিন এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলতে থাকবে বলেও তিনি জানান।