ফাইল চিত্র।
অবৈধ ভাবে জমি দখল রাখা নিয়ে উপাচার্য সংবাদমাধ্যমের কাছে যে ‘মিথ্যা অভিযোগ করেছেন’, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বিশ্বভারতীকে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন অমর্ত্য সেন। এ বার পাল্টা ই-মেলে নিজেদের বক্তব্য জানালেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ লিখেছিলেন, “নতুন নতুন মিথ্যা সাজিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ আর না-বাড়িয়ে, বিশ্বভারতীর উচিত আমার আইনজীবী যেমনটি বলেছেন, সেই মতো মিথ্যা অভিযোগগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।” যদিও জবাবি ই-মেলে জমি ‘জবরদখল’ এবং উপাচার্যকে ফোন করার প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থানেই বিশ্বভারতী অনড় থেকেছে। তবে, বিশ্বভারতী তাঁকে ‘অপদস্থ’ করতে চায় না বলেও ই-মেলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৯ ডিসেম্বর উপাচার্য ও বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের অভ্যন্তরীণ বৈঠকের পরে অধ্যাপক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, বৈঠকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেন, অমর্ত্য সেন নাকি নিজেকে ‘ভারতরত্ন’ বলে পরিচয় দিয়ে ‘প্রতীচী’ বাড়ির সামনে হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন। ওই সংগঠনের এ-ও অভিযোগ ছিল, উপাচার্য বৈঠকে বলেছিলেন, ‘প্রতীচী’ বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে লিজ়ের অতিরিক্ত বিশ্বভারতীর জমি ‘বেআইনি’ ভাবে ঢুকে আছে। ভিবিইউএফএ-র ই-মেল পাওয়ার পরে একাধিক বার বিশ্বভারতীর এই দুই দাবিকে মিথ্যা বলে জানিয়েছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ।
লফার্মের মাধ্যমে পাঠানো ইমেলে অমর্ত্য সেন এ-ও জানান, বিশ্বভারতীর লিজ় দেওয়া জমি ছাড়াও তাঁর বাবা আশুতোষ সেন সুরুল মৌজার বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। সেগুলিও ‘প্রতীচী’ বাড়ির সীমানার অন্তর্ভুক্ত এবং এই জমির নিয়মিত খাজনাও তিনি পঞ্চায়েতকে দেন।
মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর কর্মসচিব ওই ল’ফার্মকে পাল্টা মেল পাঠিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য তুলে ধরেন। যেখানে আবারও প্রযুক্তি এবং রাজ্য সরকারের জমি জরিপের সাহায্য নিয়ে ‘ফোনকল’ প্রসঙ্গে এবং জমি-বিতর্কের নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর দাবি, “সেই চেষ্টা না করে তিনি (অমর্ত্য সেন) ইমেল এবং প্রেস বিবৃতি দিয়ে খামোকা অর্থহীন প্রতিকূল বাগযুদ্ধ করে চলেছেন।’’ অর্থনীতিবিদের কাছে তাদের আবেদন, “এই বাদানুবাদের পূর্ণচ্ছেদ ঘটিয়ে বিষয়টিকে তর্কাতীত ভাবে প্রতিষ্ঠা করুন, যাতে তর্কের নামে এই সার্কাসের অবসান হয়।’’ এ ছাড়া, ই-মেলে উপাচার্যের মন্তব্য, “এক ভারতরত্ন গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে মাঝেমধ্যে এসে কাটিয়ে যান বলে বিশ্বভারতী গর্বিত নয়, এমন কথা বলা হয়নি, কিন্তু বিশ্বভারতীতে আমাদের অনেক কিছুই যাচাই করবার মতো তথ্য এবং অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।’’
তবে, ভিবিইউএফএ-র ভূমিকায় তাঁরা যে ক্ষুব্ধ, তা-ও চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, “বিশ্ববিদ্যালয় নিজের থেকে জমি মাপামাপি বা ফোনকলের সত্যাসত্য নির্ণয় করতে যাবে না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়গুলি অধ্যাপক সেন বা সংবাদমাধ্যমের কাছে নিয়ে আসা হয়নি। ঘরোয়া সভায় বলা কথাগুলি বাইরে চাউর করেছিলেনএক জন দুষ্ট সহকর্মী, অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য; যার আইনি দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে বর্তায় না।’’ প্রসঙ্গত, পাঠভবনের অধ্যক্ষার উদ্দেশে ‘কুরুচিকর’ এবং ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ মন্তব্য প্রচার করা এবং অধ্যক্ষার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ অনেককে পাঠানোর অভিযোগে সম্প্রতি সুদীপ্তবাবুকে সাসপেন্ড করেছে বিশ্বভারতী।
ই-মেলের শেষে উপাচার্যের বার্তা, “বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে (অমর্ত্যবাবু) কোনও ভাবেই অপদস্থ করতে চায় না বা তাঁর পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার খর্ব করতে চায় না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হল, বিশ্বভারতীর ন্যায্য জমি পুনরুদ্ধার করা, যাতে নিশ্চয়ই অধ্যাপক সেনের সমর্থনও আমরা পাব।’’