প্রতিবাদ: উপাসনাগৃহের সামনে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
একটি ভিডিয়ো ফুটেজে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ‘বাইক-বাহিনী’ আনার নির্দেশ দিচ্ছেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রী ঐক্য মঞ্চ। থানায়ও এ নিয়ে অভিযোগ জানায় তারা। সোমবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে প্রতিবাদ সভা করার কথা ছিল মঞ্চের পক্ষ থেকে। সেই সভার কয়েক ঘণ্টা আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও গবেষণা ও পঠনপাঠন সংক্রান্ত এলাকাকে ‘নো ডিস্টার্ব জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করল বিশ্বভারতী।
সোমবারই জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই সমস্ত এলাকাগুলিতে কোনও মিটিং-মিছিল, অবস্থান বিক্ষোভ, জমায়েত কোনও ভাবেই করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। ওই নিয়ম লঙ্ঘন করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ওই সব জায়গাগুলিতে নজরদারি চালানোর জন্য লাগানো হয়েছে আটটি সিসি ক্যামেরা, দুটি মেটাল লাইট।
সম্প্রতি সিএএ নিয়ে বক্তৃতা দিতে বিশ্বভারতীতে এসে প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি সমর্থিত সাংসদ স্বপন দাশুগুপ্ত। কেন্দ্রীয় ভবনের সামনেও বিক্ষোভ হয়। বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে ওই বক্তৃতা হওয়ার কথা থাকলেও তা শ্রীনিকেতনে সরিয়ে নিয়ে যান কর্তৃপক্ষ। সেখানেও টানা বিক্ষোভে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি আটকে থাকেন সাংসদ, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। তার ক’দিন পরেই বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তারপরে গভীর রাতে বিশ্বভারতীর হস্টেলে হামলার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের অভিযোগ, ওই বক্তৃতার প্রতিবাদ করাতেই উপাচার্যের ঘনিষ্ঠরা হামলা চালায়। ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়ো ফুটেজের ভিত্তিতে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করে মঞ্চ। শুক্রবার রাতে প্রকাশ্যে আসা ওই ভিডিয়ো ফুটেজে (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) দেখা যাচ্ছে, মোমবাতি মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে উপাচার্য পাশের এক যুবককে বলছেন, ‘বাইক-বাহিনী নিয়ে চলে এস...’। বিশ্বভারতীর তরফে অবশ্য ওই ভিডিয়ো ফুটেজে যে গলা শোনা যাচ্ছে, তা উপাচার্যের নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এ দিন ওই ঘটনার প্রতিবাদেই কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে প্রতিবাদ সভা করার কথা ছিল মঞ্চের তরফে। কিন্তু তার আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা বন্ধ করা ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের। তাঁদের দাবি, প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সবার রয়েছে। এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। বিশ্বভারতীর পড়ুয়া দীপঙ্কর সরকার, শ্রীরাধা বসাক, শাহনাজ খাতুনরা বলেন, ‘‘এই সমস্ত করে উপাচার্য চাইছেন আন্দোলনকে দমন করতে। এর আগেও বিশ্বভারতীর ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করায় ৮০ জন পড়ুয়ার বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে সিএএ বক্তৃতা সভার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম বলে আজ জায়গাটিকে নো ডিস্টার্ব জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’’
পড়ুয়াদের অবশ্য দাবি, এই সমস্ত করে আন্দোলন আটকানো যাবে না। এ দিন সন্ধ্যায় মঞ্চের পক্ষ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরে পরিবর্তে উপাসনা গৃহের সামনে ছাত্রছাত্রীরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। গাওয়া হয় রবীন্দ্রসঙ্গীতও। সভা থেকে উপাচার্যকে ধিক্কার ও গো ব্যাক স্লোগানও দেওয়া হয়। আলোচনা করে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিককে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।