এখানেই মেলে সেই মুদ্রা (বাঁ দিকে), ১৯০৫ সালের সেই ‘ওয়ান রুপি কয়েন’। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দু’শো বছরের পুরনো মাটির বাড়ি। তার দেওয়াল ভাঙতেই মিলল রুপোর কয়েন। একটি-দু’টি নয়, বেশ কয়েকটি।
লকডাউনের মধ্যেও শনিবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুরে এই খবর রাষ্ট্র হতে দেরি হয়নি। ভিড়ও জমেছে দ্রুত। রৌপ্যমুদ্রা কুড়িয়ে নিতে হুড়োহুড়ি পড়েছে। শিকেয় উঠেছে সামাজিক দূরত্ব, জমায়েত না করার মতো করোনা বিধি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জখম হয়েছেন ওই বাড়ির লোকজন। অবস্থা এমনই যে ঠিক কতগুলি রৌপ্যমুদ্রা মিলেছে, তা স্পষ্ট হয়নি। কারণ, যে যতগুলি পেরেছেন, কুড়িয়ে নিয়ে পালিয়েছেন। ওই পরিবারের সদস্য তারক কুণ্ডু বলছিলেন, ‘‘কতগুলি মুদ্রা ছিল আমরাও জানি না। এলাকার অনেকে এসে মুদ্রা নিয়ে গিয়েছেন। বাড়িটা আমাদের। অথচ, আমরাই ২-৩টি মুদ্রা পেয়েছি।’’
আনন্দপুরের জেলেপাড়ায় পুরনো মাটির বাড়ি ছিল রমণ কুণ্ডুদের। প্রায় দু’শো বছরের পুরনো সেই বাড়ি ছেড়ে মৎস্যজীবী রমণরা এখন অন্য বাড়িতে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় আমপানে পুরনো বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টিনের চাল উড়ে যায়। তাই ওই বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার দুপুরে জেসিবি মেশিন দিয়ে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছিল। বিকেল নাগাদ একটি মাটির দেওয়াল ভাঙার সময়েই মেলে রুপোর মুদ্রা। মুদ্রাগুলি ১৯০৫ সালের অর্থাৎ, বঙ্গভঙ্গের সময়ের। মুদ্রায় তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের ছবি খোদিত রয়েছে। মুদ্রার ছবি দেখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা সুতপা সিংহও বলেন, ‘‘এই মুদ্রা বঙ্গভঙ্গের বছরের। এগুলি ওয়ান রুপি কয়েন।’’
স্থানীয় অনেকের অনুমান, রৌপ্যমুদ্রাগুলি কলসির মতো কোনও পাত্রে ওই বাড়ির দেওয়ালের খাঁজে লুকনো ছিল। দেওয়াল ভাঙতে গিয়ে পাত্র ভেঙেছে। বেরিয়ে পড়েছে গুপ্তধন। তারকের বাবা বছর বাষট্টির রমণ বাড়ির মালিক। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই সব রুপোর মুদ্রা গোপনে রেখেছিলেন বলে মনে হয়।’’ তারক জুড়ছেন, ‘‘বাবার মুখে শোনা, দাদু না কি বলতেন যে, আমাদের বাড়িতে প্রাচীন মুদ্রা রয়েছে। কোথায় রয়েছে দাদুও জানতেন না। দাদুও তাঁর বাবার মুখে শুনেছিলেন। আমরা এতদিন ভেবেছি, এ সব গল্প। এখন বুঝছি, গল্প নয়, সত্যিই!’’
পুরনো বাড়ি ভাঙতে গিয়ে গুপ্তধন মিলেছে— খবর জানাজানি হতেই জেলেপাড়ার ওই বাড়ির কাছে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ভিড় ঠেলে রৌপ্যমুদ্রা ‘বাঁচাতে’ গিয়ে জখম হন তারকরা। বছর ছাব্বিশের তারক বলছিলেন, ‘‘সে কী ভিড়! সকলেই কয়েন কুড়োতে চায়। ঝগড়া, ঝামেলা, মারপিট— সবই হয়েছে। আমিও জখম হয়েছি।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দার স্বীকারোক্তি, ‘‘পুরনো বাড়ির দেওয়াল থেকে গুপ্তধন ছিটকে পড়ছে শুনেই ছুটে আসি। ততক্ষণে মুদ্রা কুড়োতে হুড়োহুড়ি পড়েছে। অনেক কষ্টে একটা কয়েন পেয়েছি। সেটা লুকিয়ে রেখেছি।’’
খবর পেয়ে শনিবার সন্ধে নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘আনন্দপুরের ওখানে কিছু পুরোনো মুদ্রা মিলেছে বলে শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।’’ কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষেরও বক্তব্য, ‘বিষয়টি দেখছি।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হবে।