Indian Rail

সাড়ে ৫ লাখ দিলেই রেলে চাকরি! রেলকর্তার ভিডিয়ো ফাঁস হতেই হুলস্থূল, বড় চক্রের হদিশ

সৌমেন্দ্রনাথের হাতে দেড় লাখ টাকা তুলেও দেন বলে তাঁর দাবি। সেই ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন রাকেশ। ওই যুবকের দাবি, পরে নারকেলডাঙা এলাকায় একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাকি যে চার লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। সেটাও ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন ওই যুবক।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৯
Share:

হাতে নাতে। টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো ফাঁস।

স্যান্ডো গেঞ্জি পরে ঘরের মধ্যে বসে রয়েছেন রেলের এক অফিসার। উল্টো দিকে চাকরিপ্রার্থী। ঘরের মধ্যেই চলছে ‘ইন্টারভিউ’।

Advertisement

ওই অফিসারের প্রশ্ন: কোথায় চাকরি চাই? দুটো জায়গা ব্লক করে তো লাভ নেই, কত এনেছেন?

চাকরিপ্রার্থী: আমাকে কত দিতে হবে?

Advertisement

সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা প্রশ্ন এল, ‘‘এখন কত এনেছেন?’’

পকেট থেকে ওই যুবক এর পর বার করে দিলেন দেড় লাখ টাকা। টাকার বান্ডিল নিয়েই রেলের অফিসার জানিয়ে দিলেন, ‘‘আপনাকে আরও চার লাখ টাকা দিতে হবে। চাকরি পেতে বেশি দিন লাগবে না।’’

এর পরে কী করতে হবে, তা-ও বুঝিয়ে দেন ওই অফিসার। তার পর বললেন, ‘‘আমার তিনটে মোবাইল নম্বর রয়েছে। কোনও দরকার পড়লে ফোন করবেন। কোথাও যেন আবার চলে যাবেন না।’’

গোটা কথোপকথনটাই লুকিয়ে মোবাইলে ভি়ডিয়ো রেকর্ড করে রাখেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা রাকেশ পণ্ডিত। তাঁর অভিযোগ, ওই কথোপকথনের সময় দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তিনি বাকি চার লাখ টাকাও দিয়ে দেন। কিন্তু, রেলে তাঁর কোনও চাকরি আজ পর্যন্ত হয়নি। এর পর অফিসারের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন ওই যুবক।

রাকেশের অভিযোগ, রেলের ওই অফিসার পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে কর্মরত। তাঁর নাম সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। টাকা দিলেই ‘ঠাকুর সাহেব’ রেলে চাকরি করে দেন— এমনটাই এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলেন রাকেশ। স্নাতক হওয়ার পর ওই যুবক সল্টলেকের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। পাশাপাশি, সরকারি চাকরির চেষ্টাও করছিলেন। তাই বন্ধুর কাছে কথাটা শুনেই আশান্বিত হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি যোগাযোগ করেন সৌমেন্দ্রনাথের সঙ্গে। তিনি তখন রাকেশকে জানান, সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা এলাকায় রাকেশের অফিসে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন সৌমেন্দ্রনাথ।

আরও পড়ুন: ছবি এঁকে রোজগার করলেও চোর! তোপ মমতার, ভাবনায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও

রাকেশের দাবি, কথা মতো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তাঁর অফিসে এসে দেখা করেন সৌমেন্দ্রনাথ। প্রাথমিক কথাবার্তার পর রেলের ওই অফিসার রাকেশকে তাঁর নারকেলডাঙার ফ্ল্যাটে এসে টাকা দিয়ে যেতে বলেন। ওই মাসেই সৌমেন্দ্রনাথের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা করেন রাকেশ। সৌমেন্দ্রনাথের হাতে দেড় লাখ টাকা তুলেও দেন বলে তাঁর দাবি। সেই ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন রাকেশ। ওই যুবকের দাবি, পরে নারকেলডাঙা এলাকায় একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাকি যে চার লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। সেটাও ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন ওই যুবক।

অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারি মাসে টাকা নেওয়ার পর থেকে রাকেশকে ঘোরাচ্ছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ। কোনও ভাবেই রেলে চাকরি পাননি রাকেশ। শেষে ধৈর্য হারিয়ে তিনি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। কিন্তু, থানার অফিসারেরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁকে বলা হয়, নারকেলডাঙা থানায় যেতে। রাকেশের কথায়, ‘‘ওই থানায় গেলে সেখানকার কর্মীরা আমাকে বলেন, আপনার সঙ্গে যেখানে ওই ব্যক্তির আলাপ হয়েছিল, সেখানে গিয়ে অভিযোগ করুন।’’ এর পর তিনি ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ জানাতে যান। সেখানেও অভিযোগ নেননি পুলিশ কর্মীরা বলে রাকেশের দাবি। শেষে তিনি লালবাজারে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি পূর্ব রেলেও অভিযোগ জানান। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।”

তবে, পুলিশের কাছে রাকেশ অভিযোগ করার পর থেকেই সৌমেন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বেপাত্তা। তাঁর সন্ধানে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়েই গৌতমের টাকা নেন সুদীপ্ত

সৌমেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহামাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষকে আমরা সব সময় এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়া নিয়ে সতর্ক করছি। অভিযোগ এলেই তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেলের কোনও কর্মী এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

পুলিশ সূত্রে খবর, জাল টিকিট, রেলে চাকরি দেওয়ার একটি বড়়সড় চক্র গোটা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে। ব্যতিক্রম নয় এ রাজ্যও। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই চক্রেরই এক জন বলে মনে হচ্ছে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement