এক্রামুল বাগানি। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ মিনিট ধরে নিজের বক্তব্য পেশ তুলে ধরেছিলেন তিনি। ইউটিউব, ফেসবুকের কল্যাণে তা এখন ‘ভাইরাল’! সেই ভিডিয়োর দৌলতেই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ এক্রামুল বাগানি। সোনারপুরের শিমুলতলার একচিলতে ঘরে বসে কম্পিউটারে এক মনে কাজ করে চলেছেন পেশায় গাড়িচালক এক্রামুল বলেন, ‘‘আমি চাই, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক। তবেই আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।’’
আর্থিক অনটনে মাধ্যমিকের পরে পড়াশোনা করতে পারেননি এক্রামুল। তা নিয়ে খেদও রয়েছে খুব। মেয়েকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। প্রথাগত উচ্চশিক্ষা না-থাকলেও শখ আছে লেখালেখির। একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে তাঁর। সুবক্তা হিসেবে পরিচিতি আছে নিজের এলাকায়। সেই পরিচিতি থেকেই ৮ জানুয়ারি শাসনে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান তিনি। সেই অনুষ্ঠানের ভিডিয়োই ছড়িয়ে পড়েছে নেট-দুনিয়ায়।
শাসনের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা আইনজীবী তারিকুর রহমান বলেন, ‘‘এক্রামুল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। তাই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।’’ সে-দিনের অনুষ্ঠানে ঠিক কী বলেছিলেন এক্রামুল?
এক্রামুল বলেছিলেন, সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য কোনও মুসলিমের মন্দিরে পুজো করার দরকার নেই বা কোনও হিন্দুরও মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়ার প্রয়োজন নেই।
হজরত মহম্মদের আদর্শ অনুসরণ করে মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। তবেই সম্প্রীতি গড়ে উঠবে। ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত সমাজ গড়ার কথাও বলেছেন তিনি। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি ধর্মীয় স্লোগান নিয়ে এক্রামুলের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণও নেট-নাগরিকদের কুর্নিশ কুড়িয়েছে বিস্তর। অনেকেই তাঁর বক্তৃতার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন।
সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়েও সচেতন এক্রামুল। তবে জানাচ্ছেন, ওই আইনের খুঁটিনাটি তিনি এখনও পড়ে উঠতে পারেননি। ‘‘নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কয়েক মাস ধরে আমাদের মধ্যে একটা বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে। ছোটবেলার বন্ধুরা দূরে সরে যাচ্ছে। বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। পরিচিতেরা সব অচেনা হতে শুরু করেছে,’’ বললেন এক্রামুল।
সাধারণ গাড়িচালক থেকে সামাজিক মাধ্যমের এমন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার যাত্রাপথও নিজের মুখে শোনালেন এক্রামুল। কাজের ফাঁকে অনেকটা সময়ই কাটে গাড়িতে বসে। সময় কাটাতে ইন্টারনেটে বিভিন্ন খবর দেখতেন, ইউটিউব দেখতেন তিনি। এক্রামুল বলেন, ‘‘এ ভাবেই নিজের ইউটিউব চ্যানেল খোলার কথা মাথায় আসে।’’ এলাকার যে-সব সভা-সমাবেশে তিনি থাকেন, তারই ছবি, ভিডিয়ো প্রচার করেন এক্রামুল।
ছেলের এমন কাজকর্মে ভয়ে পেয়েছিলেন এক্রামুলের বাবা উজিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘এ-সব করলে ঝামেলা হয়। তাই নিষেধ করেছিলাম।’’ তবে এখন আর সে-সব ভাবছেন না তিনি। ‘‘এক সময় সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। এ ভাবেই তাই সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে নিজের ইচ্ছেপূরণ করছি,’’ বললেন এক্রামুল।