ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতীর নানা সিদ্ধান্ত, সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে নিজের বক্তব্য খোলা চিঠির আকারে তুলে ধরছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শনিবার, পঞ্চম দফার চিঠিতে বিশ্বভারতীর ‘আশ্রমিক’ এবং তাঁদের ‘রাবীন্দ্রিক আদর্শ’কে কটাক্ষ করেছেন উপাচার্য।
‘পঞ্চম বার্তালাপ’ শীর্ষক এই চিঠিতে তিনি রাবীন্দ্রিক আদর্শকে একটি ‘সর্বজনীন নামাবলি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা গায়ে চাপিয়ে বিশ্বভারতীর মধ্যে অনেকে ‘নিজেদের অস্তিত্ব ও ব্যক্তিগত লাভালাভের পথ খুলে রাখেন’ বলে উপাচার্যের অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘আশ্রমে ‘রাবীন্দ্রিক’-দের ঘনঘটা বিশেষ ভাবে নজর করার বিষয়।’’ চিঠিতে তাঁর অভিমত, সমবেত প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা, নিঃস্বার্থ ভাবে প্রান্তিক মানুষদের প্রতি মমত্ববোধ, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা, অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের হাতে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং সর্বোপরি কাজের মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার নামই ‘রাবীন্দ্রিকতা’। কিন্তু বিদ্যুৎবাবুর অভিযোগ, রবীন্দ্র-আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে সাপ্তাহিক উপাসনায় যোগ দেওয়া কিংবা প্রতি মাসের ক্যাম্পাসে সাফাই অভিযানে যোগ দেওয়ার প্রতি ‘তথাকথিত রাবীন্দ্রিক’দের আগ্রহ নেই।
উপাচার্য কর্মী, অধ্যাপক এবং প্রাক্তন আধিকারিকদের একাংশের উদ্দেশেও কিছু কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শান্তিনিকেতনে প্রচলিত কথা আছে, “বিশ্বভারতীর ঘুম ভাঙে ‘গণদেবতা এক্সপ্রেস’ এলে, আর সে এলিয়ে পড়ে ১২.৪৫ এর ‘শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস’ গেলে, এই কথা অতিশয়োক্তি হলেও তার খানিকটা সারবত্তা আছে বইকি।”
শান্তিনিকেতন বাঁচাও কমিটির সম্পাদক তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুবোধ মিত্রের প্রতিক্রিয়া, “শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের নামে নিজের আখের গোছানোর মতো কাজ কিছু মানুষ করেন। আর যাঁরা করেন, তাঁরাই বর্তমান উপাচার্যের সবচেয়ে কাছের মানুষ।’’ তাঁর দাবি, পৌষমেলা বন্ধ করে দেওয়াও একই রকম ভাবে রাবীন্দ্রিকতার বিরোধী। পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলছেন, ‘‘কিছু মানুষের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামকে ব্যবহার করে অসাধু কাজ করার উদ্দেশ্য থাকতেই পারে। কিন্তু উপাচার্য যে-ভাবে সমস্ত আশ্রমিক ও রাবীন্দ্রিক আদর্শের অনুগামী মানুষকে একই সারিতে বসালেন, তা মেনে নেওয়া যায় না!’’