দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিজস্ব চিত্র।
মূত্রনালীর জটিলতা নিয়ে জন্মানোর পরেই শরীরে করোনার থাবা! হাসপাতালে যমে-মানুষে টানাটানি চলছিল গত তিন-চারদিন ধরে। শুক্রবার রাতে জটিল অপারেশনে নতুন জীবন ফিরে পেল ৯ দিনের সদ্যোজাত। সৌজন্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি, রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা— সব নিয়েই গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে একাধিক বার। এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে ৯ দিনের করোনা আক্রান্ত ওই শিশুর জটিল অস্ত্রপ্রচার করে নজির গড়ল মেডিক্যাল কলেজ। এর আগেও অনেক কঠিন অস্ত্রোপচার হয়েছে এই হাসপাতালে। সেই মুকুটে আরও একটি নতুন পালক জুড়ল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তারকেশ্বরের বাসিন্দা রিম্পা মাইতি গত ৩০ জুলাই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন অন্য একটি হাসপাতালে। শিশুটি জন্মানোর পর, তার দু’টি কিডনিতে জল জমতে শুরু করে। কলকাতারই একটি নামী শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে মূত্রনালীর সমস্যা ধরা পড়ে। ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব বার করার চেষ্টাও হয়। চিকিৎসা চলাকালীন অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয় শিশুটির। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এর পরেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হয়।
করোনা আক্রান্ত শিশুটিকে এর পরই আনা হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নবজাতক বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। এর পর শিশুশল্য বিভাগের অধীনে চিকিৎসা শুরু হয়। মেডিক্যাল কলেজে শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করে জানা যায়, তার মূত্রনালীর পর্দা সংক্রান্ত জটিলতা (পস্টেরিওর ইউরেথ্রাল ভালভ বা পিইউভি) রয়েছে। মূত্রনালী থেকে রক্তও বার হতে থাকে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের দাবি, জন্মগত সমস্যা ছিল শিশুটির। আগের শিশু হাসপাতালে ক্যাথেটার পরানোর সময় সেই জটিলতা আরও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার খরচ রাশে ভরসা অ্যাডভাইজ়রি
এর পরই দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুশল্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুজয় মৈত্র, অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর রাজর্ষি কুমার, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসীম কুণ্ডুর নেতৃত্বে ওই টিম তৈরি হয়। শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হয় অস্ত্রোপচারের তোড়জোড়। চলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। রাত ১১টা নাগাদ শিশুশল্য বিভাগের এমার্জেন্সি সার্জেন মিত্রজিৎ মল্লিক, সিনিয়র রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের এমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার বাণী কুণ্ডুর তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার সফল হয়।
আরও পড়ুন: মায়ের বদলে অন্য মহিলার দেহ দিল মর্গ, কাঠগড়ায় হাসপাতাল-পুরসভা
মিত্রজিৎ মল্লিক শনিবার বলেন, “পিইউভি একটি জটিল জন্মগত সার্জিক্যাল সমস্যা। শিশুটিকে ক্যাথেটার পরাতে গিয়ে সমস্যা হয়। তার দরুণ রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তাই জীবন বাঁচানোর জন্য কোভিড আক্রান্ত অবস্থাতেই জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হয়। শিশুটি এখন সুস্থ আছে।”
চিকিৎসা পরিভাষায় এই অপারেশনকে বলে ‘ভেসিকোস্টোমি’ বলা হয়। অর্থাৎ মূত্রথলিকে তলপেটের ত্বকের সঙ্গে প্রতিস্থাপিত করা হয়। নবজাতক পেডিয়ার্টিক মেডিশনের অধীনে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। করোনা টেস্ট করা হবে তার বাবা-মায়ের।