গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এত বছরের অভ্যাস যাবে কোথায়! সাগরদিঘির সভায় ভাষণ শেষ করার আগে সদ্য দলত্যাগী নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল বলেই ফেললেন—‘লাল সেলাম’। মঞ্চে তখন জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী-সহ জেলা তৃণমূলের নেতৃত্ব রয়েছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে ভুল বলে ফেলেছেন বুঝতে পেরেই তিনি দ্রুত জিভ কাটলেন। তত ক্ষণে সভার ম়ঞ্চ জুড়ে হাসির রোল ওঠে। ওই কথা শুনে মুচকি হাসেন শুভেন্দু অধিকারীও।
এর আগে একই ঘটনা ঘটেছিল রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল ইসলাম চৌধুরীর ক্ষেত্রেও। ২০১৬ সালে কংগ্রেস ছেড়ে রবিউল ইসলাম সদ্য শাসক দলে পা রেখেছেন। সে বছরই কংগ্রেসের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ দখল করার দিনে বহরমপুর পঞ্চাননতলা মোড়ের কাছে সভার আয়োজন করে তৃণমূল। ম়ঞ্চে হাজির ছিলেন রবিউল ইসলাম চৌধুরী। বক্তব্য শেষে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ বলার পরেই ‘অধীর চৌধুরী জিন্দাবাদ’ বলেই ভুল শুধরে নিতে জিভ কেটে হেসে ফেলেন তিনি। পরে বক্তব্য রাখতে উঠে শুভেন্দু অধিকারী হাসতে হাসতে শুরুতেই বলেন, ‘‘এত দিনের অভ্যাস এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি রবিউলদা। আশা করছি দ্রুত কেটে যাবে।’’
তবে গত ২ ডিসেম্বর নবগ্রামের রসুলপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে শাসক দলে যোগ দেন কানাই মণ্ডল। কিন্তু এ দিন তাঁর মুখে ‘লাল সেলাম’ শুনে পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। টানা ৪১ বছরেরও বেশি সময় বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন কানাইবাবু। ১৯৭৭ সালে দলীয় সদস্য পদ পেয়ে পরের বছরই হন পঞ্চায়েতের সদস্য। প্রধানও হয়েছিলেন এক বার। মূলত বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের মুখ কানাই মণ্ডল ২০১১ ও ২০১৬ সালে দু’-দু’বার বিধায়কও হয়েছেন নবগ্রামের। বছর খানেক আগে দলের ক্ষেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদকও মনোনীত হন তিনি।
আরও পড়ুন: জনজাতি উন্নয়নে গেলেন সেই জেলাশাসক
শুভেন্দুর সামনে মিলুন হাসান। তাঁর বাঁ দিকে কানাই মণ্ডল।
এ দিন সাগরদিঘির জনসভাতে ভাষণ শেষ করতে গিয়েই তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল ‘লাল সেলাম’। কানাইবাবু অবশ্য মুচকি হেসে প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন। যা শুনে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, “দীর্ঘ দিনের অভ্যেস কি এত সহজে বদলানো যায়? সবে তো এক মাস হয়েছে কানাইদার দলত্যাগ। মা মাটি মানুষের ভাষা রপ্ত করতে কিছু দিন সময় তো লাগবেই।’’