‘উত্তম স্মরণ সন্ধ্যা’
বাংলা ছায়াছবির সাদা কালো পর্দা জুড়ে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। তিনি বাঙালির ‘ম্যাটিনি আইডল’, মহানায়ক উত্তম কুমার। বাঙালি মননে, চেতনায় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো আজও তিনি বিরাজমান। রামধনুর রঙ ছড়িয়ে আমাদের মনের ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে আছেন। উত্তম কুমার শুধুই শিল্পী নন, তিনি নিজেই ছিলেন শিল্প। যিনি নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে। সামাজিক দায়বদ্ধতায় পথিকৃৎ হয়ে মানুষের আর্তনাদে, তিনি ফিনিক্স পাখির মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সেই পথ ধরেই মহানায়কের ৪৪তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে আগামী ২৪ জুলাই, কলকাতার উত্তম মঞ্চে বিকেল ৫টায় এক বর্ণময় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যের আয়োজন করতে চলেছে ‘উত্তম মেমোরিয়াল কালচারাল কমিটি’। প্রতি বছরের মতোই সেই অনুষ্ঠানে উঠে আসবে মহানায়কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা স্মৃতিকথা। কথায়-গল্পে-গানে আগামী প্রজন্মের কাছে আবারও পৌঁছে যাবে তাঁর সৃষ্টি। বাঙালি যত দিন থাকবে, তাঁর সৃজনশীলতার আলোয় উদ্ভাসিত হবে বাঙালি জীবন।
মহানায়ক নিজেই ছিলেন এক জন সুরস্রষ্টা এবং গায়ক। তা ছাড়া, তাঁর ছায়াছবিতে যে গান সৃষ্টি হয়েছে, তা কোহিনূরের মতো বাংলা গানকে এখনও সমৃদ্ধ করে রেখেছে। বাংলা ছায়াছবির ইতিহাসে সেই সব গান যেন আজও অমর সৃষ্টি হয়ে থেকে গিয়েছে। মহানায়কের দেখানো সেই পথে হেঁটেই প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড। বাংলা ছায়াছবির সঙ্গে যুক্ত থাকা বয়স্ক বা অসুস্থ এবং অবসরপ্রাপ্ত শিল্পীদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক জন মান্য ব্যক্তিত্বকে ‘উত্তম কুমার স্মারক সম্মানে’ সম্মানিত করা হয়।
এ বছরও ২৪ জুলাই ‘উত্তম স্মরণ সন্ধ্যা’র মঞ্চে আর্থিক ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হবে দু’জন এমন ব্যক্তিত্বকে, যাঁরা মহানায়কের ছবিতে অ্যাসিস্ট্যান্টের ভূমিকায় দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন রমেশ অধিকারী (৮৭), যিনি উত্তম কুমার অভিনীত সিনেমায় ‘প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট’ এবং অগ্রদূত প্রোডাকশন হাউসেও ‘প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর কাজ করা
উত্তম কুমার অভিনীত কয়েকটি চলচ্চিত্র হল ‘কমল ও মেঘ’, ‘নায়িকা সংবাদ’, ‘চিরদিনের’, ‘সোনার খাঁচা’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘মঞ্জরী অপেরা’ প্রভৃতি। অপর জন সুকুমার বোস। যিনি ‘বিরাজ বউ’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘আলো আমার আলো’, ‘দুই পুরুষ’, ‘সিস্টার’ প্রভৃতি ছবিতে ‘প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে কাজ করেছেন।
‘উত্তম মেমোরিয়াল কালচারাল কমিটি’র তরফে জানানো হয়েছে, “এ বছরেও অত্যন্ত জমকালো ভাবে সম্পন্ন হতে চলেছে মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের এই অনুষ্ঠান। থাকছেন অভিনেতা অরিজিৎ গুহ এবং অভিনেত্রী দোলন রায়ের মতো বহু বিশিষ্ট গুণীজনেরা। পাশাপাশি, আয়োজকেরা আশাবাদী, গত বছরের মতো এ বারেও প্রেক্ষাগৃহে থাকবে উপচে পড়া ভিড়। মহানায়কের সৃষ্টি নিয়েই আবারও সেজে উঠবে এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মঞ্চ।”
এ বছর গানে গানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী, লোপামুদ্রা মিত্র, হৈমন্তী শুক্লা, মনোময় ভট্টাচার্য, পৌষালী বন্দোপাধ্যায়, মাধুরী দে, গৌরব সরকার, চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য, সুজয় ভৌমিক, অঙ্কিতা ভট্টাচার্য্য, অঙ্কন আঁখি, শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায়, অরিত্র দাশগুপ্ত, গুরজিৎ সিং, বাবুল সুপ্রিয় এবং সিসপিয়া বন্দোপাধ্যায়। পাশাপাশি কমিটির তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, এ বছর ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্থাৎ উত্তম কুমারের স্মরণে জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তীকে।
অন্য দিকে, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর উত্তমকুমারের ৯৮তম জন্মদিবস উপলক্ষে উত্তম মঞ্চে আয়োজিত হতে চলেছে আরও একটি অনুষ্ঠান। যেখানে প্রতি বছরের মতো এ বারেও মহানায়ক উত্তমকুমারের কিছু গান ও তাঁর সংলাপে ডালি সাজানো হবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উঠে আসবে বাংলা ছায়াছবিতে মহানায়কের সৃষ্টি করা কিছু বিশেষ কীর্তি।
আসুন আমরাও সকলে ‘উত্তম স্মরণ সন্ধ্যা’র সাক্ষী থেকে মহানায়কের স্মৃতিচারণায় সমৃদ্ধ হই।
ডোনার পাসের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন সরাসরি উত্তম মঞ্চে অথবা যোগাযোগ করুন- ৭৯৮০৩০৮৫২৭ / ৮৭৭৭৭৮৬৯৬১ অথবা হোয়াট্সঅ্যাপ করুন ৭৯৮০৩০৪৫২৭ নম্বরে।
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।