—প্রতীকী ছবি
কোভিড আক্রান্ত যাতে সঙ্কটজনক না-হন, তার জন্য ‘মোলনুপিরাভিয়ার’ এবং ‘মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’ বা ‘ককটেল অ্যান্টিবডি থেরাপি’-কে হাতিয়ার করতে চাইছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ওই দু’টি ওষুধ প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ওই অ্যান্টিবডি থেরাপি কার্যকর হওয়ার কথা নয় বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, করোনার অন্যান্য স্ট্রেনের উপরে ভিত্তি করে ওই ‘ককটেল অ্যান্টিবডি থেরাপি’ তৈরি করা হয়েছে। এখন সংক্রমিতদের অধিকাংশই ডেল্টা কিংবা সমজাতীয় ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ‘ককটেল থেরাপির’ এখন প্রয়োজন নেই, সেটা কখনওই বলা যাবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েই রাজ্যের বেলেঘাটা আইডি, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, এমআর বাঙুর ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের উপরে এই ককটেল থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছিল।
সেই সময়ে ওই পরীক্ষার তত্ত্বাবধানে থাকা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জ্যোর্তিময় পাল জানান, মৃদু ও মাঝারি উপসর্গে আক্রান্ত যে সমস্ত রোগীর (অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে না) বয়স ষাটের উপরে কিংবা উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, কিডনির সমস্যা, ডায়াবিটিস, স্থূলতা এবং কম রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা যাবে। তিনি বলেন, “ওই সমস্ত সমস্যা থাকলে করোনা আক্রান্তের খুব তাড়াতাড়ি সঙ্কটজনক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উপসর্গ দেখা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ককটেল থেরাপি দেওয়া গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় না। সঙ্কটজনক হওয়া থেকেও আটকানো যায়। তাতে মৃত্যু প্রতিহত করা সম্ভব।”
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, উপসর্গহীনদের কোমর্বিডিটি সংক্রান্ত সমস্যা যাতে বৃদ্ধি না পায় সে দিকে নজর রাখতে হবে। আর মৃদু উপসর্গে (সামান্য জ্বর, শুকনো কাশি, সর্দি, দুর্বলতা, শরীরে যন্ত্রণা, ডায়রিয়া, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া) আক্রান্ত রোগীর যদি জ্বর না-বাড়ে, শ্বাসকষ্ট না-হলে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা, রক্তচাপ ও নাড়ির গতি ঠিক থাকলে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে পারবেন। কিংবা প্রয়োজনে ‘সেফ হোমে’ যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ বুঝে ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গের রোগীর কোমর্বিডিটি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে প্রয়োজন বুঝলে ‘মোলনুপিরাভিয়ার’ কিংবা ‘মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে ওই গোত্রীয় রোগীদের জ্বর বাড়তে থাকলে, বুকে যন্ত্রণা, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে কোভিড ওয়ার্ডে কিংবা আইসিইউ বা এইচডিইউ-এ ভর্তি করাতে হবে।
কোভিড ধরা পড়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ‘মোলনুপিরাভিয়ার’ ট্যাবলেট বাড়িতে খাওয়া গেলেও, ‘মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’-র জন্য হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর কথায়, “হাসপাতালে তিন-চার ঘণ্টার জন্য ভর্তি করে ওই থেরাপি দেওয়া হবে। তবে এটা সকলের জন্য নয়। কাকে দেবেন, চিকিৎসকেরা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।” তিনি আরও বলেন, “ওমিক্রন এখনও রাজ্যের সংক্রমণের প্রধান কারণ নয়। ডেল্টা বা ভাইরাসের অন্য যে কোনও প্রজাতিতে সংক্রমিত হয়ে এখনও ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষ উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত। সুতরাং তাঁদের ককটেল থেরাপি না দিলে খুব ক্ষতি যে হবে, তেমনটাও নয়। কিন্তু যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের সঙ্কটজনক হওয়া থেকে আটকাতে ওই দু’টি ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।”
রাজ্যে মোলনুপিরাভিয়ারের পরীক্ষামূলক গবেষণাও হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে। সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ‘ফেসিলিটেটর’ স্নেহেন্দু কোনার বলেন, “শহরে যে সমস্ত রোগীর উপরে ওই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশ ঘরে বসে দৈনিক ২টি করে ৫ দিন ওষুধটি খেয়েছিলেন। তাতে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। যে সমস্ত বয়স্ক রোগীর অক্সিজেন মাত্রা ৯৩ শতাংশের নীচে ছিল, তাঁরাও সঙ্কটজনক হননি। দেশের ১৩টি সংস্থা ওই ট্যাবলেট তৈরি করছে।”
অন্য দিকে কোমর্বিডিটি-সহ উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীর যদি অক্সিজেন মাত্রা কমা, বুকে যন্ত্রণা-সহ অন্যান্য সমস্যা থাকে এবং মিনিটে ১০ লিটারের কম অক্সিজেন লাগে, তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। সে ক্ষেত্রেও অন্যান্য ওষুধের মতো ‘মোলনুপিরাভিয়ার’ এবং ‘মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’ প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। তবে রোগীর অবস্থা যদি স্থিতিশীল না হয় কিংবা প্রথম থেকেই যদি মিনিটে ১০ লিটারের বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তা হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রেখে কী ওষুধে চিকিৎসা হবে তারও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।