যেখানে যেমন ভাবে পারি, সেই পরিসরেই প্রতিবাদ নথিভুক্ত করে যাব। এই স্পৃহা নিয়েই বাঁচতেন অশোক মিত্র। তাঁর স্বভাবের এই বৈশিষ্ট্যের কথাই উঠে এল স্মরণসভায়। অশক্ত শরীরেও নিজের স্বর এবং প্রতিবাদ স্পষ্ট করে দেওয়ার অশোকবাবুর প্রয়াসের কথা রাজ্য রাজনীতির যে পরিসরে চর্চায় আসছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
অশোকবাবুর অনুরাগীদের আয়োজনে এবং ‘সমাজ চর্চা ট্রাস্টে’র উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলের স্মরণসভায় দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম তথা বামফ্রন্টের প্রথম সারির নেতৃত্ব। ছিলেন শঙ্খ ঘোষের মতো বিশিষ্ট জন। স্মৃতিচারণ করার জন্য উদ্যোক্তারা বেছে নিয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং অর্থনীতির শিক্ষক জয়তী ঘোষকে। ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ বাদ দিলে তিন বক্তাই এ দিন তুলে ধরেছেন অশোকবাবুর স্পষ্ট কথা বলার সাহসের কথা। পার্থবাবু বলেছেন, ‘‘বন্ধুত্ব আর রাজনৈতিক মত আলাদা রাখতে জানতেন। তাঁর স্বাধীন চিন্তা স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করতে কখনও দ্বিধা করেননি। সেই চিন্তা শুধু তাঁর একারই, এতটা সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেও কখনও পিছপা হতেন না।’’ জয়তী বলেছেন, ‘‘ক্ষমতার মুখের উপরে সত্য কথা বলতে পারা, এই সাহস তাঁর ছিল। শরীর একেবারে ঠিক নেই যখন, তখনও মনের জোরে লড়ে যাব, লেগে থাকব, এই মনোভাব ছিল। এখন বাংলায় এবং ভারতে অনেক রকম চ্যালেঞ্জ আসছে, এই সময়ে এই শিক্ষা মনে রাখা খুবই দরকার।’’ প্রসঙ্গত, তাঁর সংগ্রহের বইয়ের সম্ভার অশোকবাবু দিয়ে গিয়েছেন কলকাতার ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’ (সিএসএসএস)-কে।
বক্তাদের মধ্যে একমাত্র বিমানবাবুই ছিলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির মানুষ। প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় অর্থমন্ত্রী অশোকবাবুর কল্যাণে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের দাবি কী ভাবে জাতীয় স্তরে উঠে এসেছিল, সংক্ষেপে সেই ইতিহাস মনে করিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি, ডঃ মিত্র বেঁচে থাকলে তাঁর আরও ক্ষুরধার মত আমরা পেতাম। এই নবম পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যা হল, উনি থাকলে লিখতেনই।’’ বিমানবাবুর মতে, অশোকবাবুর বক্তব্যের সঙ্গে কেউ ভিন্নমত হলেও তার পিছনে সাধারণের স্বার্থ সব সময় থাকত। তাই যে যেখানে আছেন, সাধারণের স্বার্থ মাথায় রেখে কাজ করলেই অশোকবাবুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে তিনি মনে করেন।