কৌস্তভ বাগচী। —ফাইল চিত্র।
বছরের শেষ দিনে আচমকাই রাজ্যের নানা জায়গায় ভেসে উঠল ‘বিকল্প রাজনীতি’র পোস্টার। সমাজমাধ্যমে বেশ কিছু দিন ধরেই এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন প্রদেশ কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা কৌস্তভ বাগচী। এমন পোস্টারের সঙ্গে তাঁর নাম জড়াতেই কৌস্তভের মুখে শোনা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কায়দায় ‘গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া’র কথা’! আবার ‘ভাই কৌস্তভ’কে সস্নেহ সমর্থন জানিয়ে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী! সব মিলিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি পা দিল লোকসভা নির্বাচনের বছরে।
শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নাম জড়িয়ে কিছু দিন আগে ‘নতুন তৃণমূল’ লেখা পোস্টারে জল্পনা ছড়িয়েছিল। অনেকটা সেই কায়দাতেই রবিবার সকালে রাজ্যের একাধিক জেলার নানা জায়গায় দেখা মিলেছে ‘বাংলায় বিকল্প রাজনীতি’ লেখা পোস্টারে। কলকাতায় শ্যমবাজার, রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, প্রদেশ কংগ্রেসের সরদ দফতর বিধান ভবনের আশেপাশে যেমন পোস্টার দেখা গিয়েছে, তেমনই উত্তরবঙ্গের মালদহ বা কোচবিহারের মাথাভাঙাতেও একই পোস্টারের দেখা মিলেছে। সেখানে অবশ্য কারও নাম নেই। তবে ‘বিকল্প রাজনীতি’ নিয়ে কৌস্তভ ইদানীং সরব। আবার তৃণমূলের মধ্যে প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব এবং আরও বিভিন্ন প্রশ্নে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেকের ‘দূরত্ব’ নিয়ে নানা চর্চা চলছে। এই আবহে পোস্টার প্রকাশ পাওয়া মাত্রই ব্যারাকপুরের বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের সামনে কৌস্তভ যা বলেছেন, তাতেও অভিষেকের অনুষঙ্গ পাওয়া গিয়েছে!
কৌস্তভ মন্তব্য করেছেন, ‘‘কে বা কারা পোস্টার দিয়েছে, জানি না। তবে বিকল্পের ভাবনাকে যারা সমর্থন করে, তারাই পোস্টার লাগিয়েছে। এটা বলতে পারি, দেওয়ালে হাত চিহ্নের পাশে ঘাসফুল আঁকা হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়ার আগে আমার গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া ভাল!’’ হালফিলের বাংলায় ‘গলায় দড়ি’ চর্চিত হয়েছে অভিষেকের সূত্রেই। কারণণ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একাধিক বার বলেছেন, ‘এক পয়সা’ দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি নিজেই গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁসি যাবেন! কোনও তদন্ত সংস্থা লাগবে না।
অভিষেকের অনুষঙ্গ যখন আসছে, দূরে নেই শুভেন্দুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তরুণ নেতা কৌস্তভ কংগ্রেসের মধ্যে থেকে কংগ্রেসকে লাইনে আনতে চাইছেন। কিন্তু পারবেন না! কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতারা মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চার বার বিরিয়ানি খেয়ে বসে আছেন!’’ কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতাকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েই বিরোধী দলনেতার আরও মন্তব্য, ‘‘ভাই কৌস্তভকে বলব, লোকসভা ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করো। চারশোর বেশি আসন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী আবার ক্ষমতায় আসবেন। তার পরে বাংলায় ডাবল ইঞ্জিন সরকার গড়তে গেলে আমাদের সঙ্গে আসতে হবে।’’
দেওয়ালে হাত চিহ্নের সঙ্গে ঘাসফুল আঁকার যে প্রসঙ্গ কৌস্তভ এনেছেন, সেই সম্ভাবনা ঠেকাতে প্রদেশ কংগ্রেসের গোটা নেতৃত্বই সরব। এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রতিদিনই অবস্থান স্পষ্ট করে চলেছেন। তা হলে কৌস্তভের ‘বিদ্রোহ’ কাদের বিরুদ্ধে? প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, আইনজীবী-নেতা বিজেপির হাতে তামাক খাচ্ছেন। প্রদেশ সভাপতি অধীর এ দিন বহরমপুরে এই প্রশ্নে বলেছেন, ‘‘কলকাতায় আমাদের দলের মুখপাত্র আছেন, তিনিই জবাব দেবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য, ‘‘অন্ধকারে যাদের পোস্টার মারতে হয়, তাদের তো মুখ দেখানোরই সাহস নেই! পদ্মফুলের জামা গায়ে দিয়ে, ক্যামাক স্ট্রিটের কয়লা-গরু-বালি চুরির টাকায় এ সব করে প্রচারে আসা যায়। কিন্তু বিকল্প উঠে আসে রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম থেকে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘এত জায়গায় পোস্টার-প্রচারের টাকা কারা দিচ্ছে? একটা দলে থেকে কেউ অন্য সুরে কিছু বললেই কি সেটা বিকল্প হয়ে যায়? রাজনীতিতে বিকল্প গড়ে ওঠে।’’
‘বিকল্প রাজনীতি’র সুর তুলে কৌস্তভ কি তা হলে কংগ্রেস ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি তো দল ছাড়ব, বলিনি! দল প্রার্থী করলে বা কোনও দায়িত্ব দিলে পালন করব না, তা-ও বলিনি। আমার কথা দল-বিরোধী হলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বা দলীয় নেতৃত্ব আমাকে সাসপেন্ড করছেন না কেন? আমার বক্তব্য তো ওঁরা অস্বীকার করতে পারছেন না!’’ প্রদেশ নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই কৌস্তভ ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ আহ্বান করছেন। যাতে ‘বিকল্পে’র সন্ধানে সুবিধা হয়। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে সহজে ‘মুক্ত’ করতে চান না!