প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। ফাইল চিত্র।
কে এই রঞ্জন?
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস ‘সৎ রঞ্জন’কে নিয়ে যে বোমাটি ফাটিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার, তবে ভিডিয়োটি যে তাঁরই তা অস্বীকার করছেন না উপেন), তা নিয়ে আপাতত শোরগোল চলছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, তখন বছরখানেক আগে উপেনবাবুর ভিডিয়োটি সামনে আসায় নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সকলেরই প্রশ্ন, টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘কারিগর’এই রঞ্জনটি আসলে কে?
ভিডিয়োয় উপেন দাবি করেছেন, রঞ্জন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাসিন্দা। শনিবার বাগদায় গিয়ে দেখা গেল, রঞ্জনের আসল পরিচয় জানেন অনেকেই। বাগদার গ্রামে একটি দোতলা বাড়িকে রঞ্জনের বলে চিনিয়ে দিলেন স্থানীয় মানুষজন। সেটি তালা বন্ধ। ফোন নম্বর দিতে পারলেন না কেউ। রঞ্জনকে ফোনে বিশেষ কথা বলতে দেখা যেত না বলেই জানালেন গ্রামের মানুষ। কেউ কেউ জানালেন, সপ্তাহখানেক আগেও স্কুটি নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্থানীয় একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক রঞ্জন। তাঁর বাড়িতে রাজ্যের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির যাতায়াত ছিল বলে দাবি গ্রামের মানুষের। তবে রঞ্জনের আচার-ব্যবহার ছিল খুবই সাদামাঠা।
বাগদার তৃণমূল নেতা অঘোরচন্দ্র হালদার বলেন, ‘‘উপেনবাবুর রঞ্জনকে আমরা চিনি। শুনেছি, অনেককে উনি চাকরি দিয়েছেন।’’ সিপিএম নেতা সুশান্ত চক্রবর্তী রঞ্জনকে নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক দুলাল বর বলেন, ‘‘উপেনবাবু কার কথা বলেছেন বলতে পারব না। তবে আমি এক জনকে চিনি, শুনেছি তিনি অনেককে চাকরি দিয়েছেন স্কুলে। চাকরি পেয়েছেন যাঁরা, তেমন কারও কারও সঙ্গে আমার পরিচয়ও আছে।’’
স্থানীয় পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এমন লোককে কে না চিনবে! তবে কোনও কারণে থানায় কখনও এসেছেন বলে মনে পড়ে না।’’
এত দিন অবশ্য রঞ্জনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি কেউই। বরং রঞ্জন যে চাকরি দিতে না পারলে সুদ-সহ টাকা ফেরত দেন, এমন কাহিনি চন্দনচর্চিত হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে। তবে ইদানীং রঞ্জনের বাড়ির সামনে চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না দিতে বিশেষ দেখে যাচ্ছিল না বলে জানালেন অনেকেই।
রঞ্জনকে নিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ করলেও আগবাড়িয়ে সিবিআইকে এ সব কথা তিনি জানাতে যাবেন না বলে শনিবার মন্তব্য করেন উপেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিবিআই কর্তারা যদি আমার কাছে রঞ্জন সম্পর্কে জানতে চান, তা হলে যতটুকু পারব, পরামর্শ দেব। কী ভাবে তদন্ত এগোতে হবে, তা-ও বলে দেব। অপরাধবিজ্ঞানী হিসেবে সে টুকু অধিকার আমার আছে।’’ শুধু সিবিআই নয়, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূল নেতৃত্বও যদি তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি ঠিক তথ্য দেবেন বলে জানিয়েছেন উপেন।