রাজনীতি: ভাটপাড়ায় বামেদের শান্তিমিছিলে বিমান বসু। (ডান দিকে) কাঁকিনাড়ায় বিশ্ব বাংলার প্রতীকে লেখা হয়েছে রাম। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
লোকসভা ভোট মিটেছে, তবে হিংসা থামছে না উত্তর চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে। কোথাও বিশ্ব বাংলার প্রতীক ‘ব’-এর নীচে ফুটকি দিয়ে ‘রাম’ লিখে দেওয়া হচ্ছে, তো কোথাও বা মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে পোস্টার পড়ছে। কোথাও আবার একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগ আনছে তৃণমূল ও বিজেপি। র্যাফ, পুলিশ নামলেও থামেনি গোলমাল। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এরই মধ্যে এলাকায় শান্তি ফেরানোর দাবি নিয়ে সোমবার ভাটপাড়ায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বে মিছিল করে বামেরা।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কাঁকিনাড়ার মাদ্রাল এলাকায় একটি হনুমান মন্দিরের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছিল বিশ্ব বাংলার প্রতীক। সোমবার সকালে দেখা যায়, সেটির গায়ে হলুদ রং দিয়ে ‘রাম’ লেখা হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এর চেয়ে ‘কলঙ্কময়’ আর কিছু হতেই পারে না দাবি করে এ দিন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এতে গোটা বাংলার অসম্মান হয়েছে।’’ ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের যদিও বক্তব্য, ‘‘ওটা হনুমান মন্দিরের নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে কারা কী করেছে, তার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ সব গোলমালের মধ্যেই এ দিন সকালে ‘মাথা কেটে নেওয়া’র পোস্টার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় মধ্যমগ্রামে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাটুলি-শিবতলা এলাকার কিছু দোকানের শাটারে সেই পোস্টার সাঁটা ছিল। তাতে সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা, ‘বিজেপি করলে মাথা কেটে নিয়ে যাব।’ স্থানীয় সেলুনের মালিক গোকুল শীল জানান, তাঁর দোকানের ঝাঁপের উপরেও কেউ এমন একটি পোস্টার সেঁটে দিয়েছে। যদিও কারা এ কাজ করেছে, পোস্টারে তার কোনও উল্লেখ নেই। এলাকার তৃণমূল নেতাদের দাবি, এটিও বিজেপির চক্রান্ত। বিজেপি-র অভিযোগ, গোলমাল বাধানোর জন্যই এ সব করছে তৃণমূল। সব ক’টি পোস্টার তুলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার তদন্তে নেমেছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ।
এ সবের পাশাপাশি, রবিবার রাতে নিমতা থানার উত্তর দমদম পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ প্রতাপগড় এলাকায় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে কয়েক জন দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তিন জন আহত হন। অভিযোগ, এক জনের হাতে গুলিও লেগেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিমতা থানায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় চলছে পুলিশি টহলদারি।
রবিবার রাতেই দত্তপুকুর থানার কোটরা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কালিয়ানি এলাকায় আয়ুব মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দত্তপুকুর থানায় অভিযোগে আয়ুবের ছেলে শরিফুল জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি-ঘর ভেঙে তছনছ করা হয়। আক্রমণের শিকার হন শিশু ও মহিলারাও। ওই ঘটনায় আহত পাঁচ জনকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
এ সবের মধ্যেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শান্তি ফেরানোর জন্য সোমবার বিকেলে ভাটপাড়া মোড় থেকে জগদ্দলের অ্যালায়েন্স জুট মিল পর্যন্ত মিছিল করেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিলের পরে বিমানবাবু বলেন, ‘‘অর্থ ছড়িয়ে, ধর্মীয় মেরুকরণের মধ্যে দিয়ে বিজেপি এই সব এলাকার দখল নিয়েছে। ‘জয় শ্রী রাম’ নিয়ে অযথা রাজনীতি হচ্ছে। প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্যই এখানে এই অশান্তি। অবস্থা ফেরাতেই এখানে শান্তি মিছিল করা হচ্ছে।’’
লোকসভা ভোটের ফল বেরোতেই এই জেলার দত্তপুকুর, শাসনের মতো এলাকায় বহু বছর পরে নিজেদের দলীয় কার্যালয় পুনর্দখল করেছে বামেরা। বিজেপি-র সাহায্য নিয়ে তৃণমূলের কাছ থেকে দলীয় কার্যালয় পুনর্দখল হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। যদিও এ প্রসঙ্গে বিমানবাবু বলেন, ‘‘কারও সাহায্য নিয়ে নয়, নিজেরাই দলীয় কার্যালয়গুলি উদ্ধার করছি।’’