নাটকীয় ভাবে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল!
কথা ছিল, বিধানসভায় শুক্রবার পেশ হবে ওই বিল। কিন্তু অধিবেশনে উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, আপাতত বিলটি স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরে কবে ওই বিল আবার আনা হবে, তার কোনও ঘোষণা এখনই করা হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, নতুন করে যে বিল আসবে, তার সঙ্গে এই বিলের মূল ভাবনার বিশেষ কোনও তফাত হবে না। তা হলে ঠিক কোন কারণে অন্তিম মুহূর্তে বিল স্থগিত করে দেওয়া হল, তা নিয়ে স্বভাবতই কৌতূহল তৈরি হয়েছে শিক্ষা ও রাজনৈতিক মহলে।
বিল স্থগিত নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা এ দিন নানা মহলের চোখ কপালে তুলে দিয়েছে! বিধানসভার মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি জানিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৬’ বিরোধীরা ভাল করে পড়ে উঠতে পারেননি। তাঁরা একটু সময় চেয়েছেন। পাশাপাশিই বিধায়কদের কাছ থেকে প্রায় ৩০-৩৫টি সংশোধনী এসেছে। এমনকী, উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে বিলের যে খসড়া করা হয়েছিল, তার সঙ্গে ছেপে আসা বিলের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে বলেও তিনি সভায় জানান। বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, বিল একেবারেই পড়ে দেখা না হলে এত সংশোধনী জমা পড়ল কী ভাবে!
পরে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘ওই বিলে এমন কিছু ভাষা আছে, যার সঙ্গে আমিও একমত নই। ব্যাকরণগত কিছু ভুলও আছে।’’ মন্ত্রীর দাবি, তিনি নিজে বিলে সবটা পড়ে উঠতে পেরেছেন মাত্র আগের দিন! মূল ভাবনা অপরিবর্তিত রেখে বিলটি আবার আসবে। এর আগে এক বার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটির সুপারিশ শিক্ষা দফতরের হাত ঘুরে যাওয়া নিশ্চিত করতে চেয়ে তৈরি করা বিল এই ভাবেই শেষ লগ্নে প্রত্যাহার করিয়েছিলেন পার্থবাবু।
রাজনৈতিক সূত্রে অবশ্য ব্যাখ্যা মিলছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই এ বারের বিল স্থগিত রাখতে হয়েছে। বিল পেশের আগে এ দিন বিধানসভায় অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তার পরেই সভায় গিয়ে বিল স্থগিত রাখার ঘোষণা করেন পার্থবাবু। বিল নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল
শিক্ষা মহলে। অভিযোগ উঠেছিল, উচ্চ শিক্ষার সবটুকু স্বাধিকার এই বিলের জেরে সরকারের কুক্ষিগত হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা মহলের এতটা বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি মুখ্যমন্ত্রী নিতে চাননি বলে শাসক শিবিরের একটি সূত্রের দাবি। যদিও সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে পার্থবাবু দাবি করেছেন, ‘‘এতে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। বরং, উনি বলেছেন বিলটা তাড়াতাড়ি আনতে!’’
বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এমন বিলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। স্থগিত হওয়ার খবর শুনে ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘শিক্ষকদের অপমান করার উদ্যোগ থেকে সাময়িক ভাবে যে সরকার বিরত থাকছে, এটা ভাল। এই বিল ভবিষ্যতে যেন আর ভুল করেও না আসে!’’ আবুটা এবং জুটা এ দিন যাদবপুরের ক্যাম্পাসে বিলের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায়। জুটার সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী যা-ই বলুন, আসলে এই বিল পাশ হলে যে ধরনের বিরোধিতা হতো, সরকার তার মুখোমুখি হতে চায়নি।’’ আবুটা-র সভাপতি তরুণ নস্কর বিল সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বিধানসভার গেটের সামনে এ দিন বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেফতার হন এসইউসি-র কর্মী-সমর্থকেরা।