ঋষি অরবিন্দকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজস্ব চিত্র
ঋষি অরবিন্দ ঘোষের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী সাড়ম্বরে পালন কথা জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে অরবিন্দের জন্মস্থানে যান অমিত। সেখানেই তিনি অরবিন্দের জন্মজয়ন্তী পালনের কথা জানান। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি মন জয় করতে তিনি যে কতটা তৎপর তাও বুঝিয়েছেন বিজেপি নেতা।
আগামী বছর ঋষি অরবিন্দের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলার ভোট মরসুমে বাঙালি আবেগকে কাজে লাগাতে এখন থেকেই ওই জন্মদিনটিকে স্মরণ করলেন অমিত। জানালেন, আগামী বছর ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হবে অরবিন্দের জন্মজয়ন্তী। অমিতের এই ঘোষণার পিছনে আসল কারণ যে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন তা মনে করছেন অনেকেই। তবে বিজেপি ওই দাবি মানতে চায়নি। বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,‘‘শুধুমাত্র ভোটের জন্য অরবিন্দ স্মরণ নয়। নতুন প্রজন্মের সামনে অরবিন্দের আদর্শ ও বাণী প্রচার করার জন্যই সাড়ম্বরে জন্মজয়ন্তী পালনের কথা বলেছেন অমিতজি। তিনি জানিয়েছেন, আমাদের এত আস্পর্ধা নেই যে আমরা অরবিন্দকে বাঁচিয়ে রাখব। আমরা শুধু অরবিন্দকে মনে রাখার জন্য তাঁর বাণী নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি।’’
অমিতের অরবিন্দ প্রেমের পিছনে কারণ শুধু যে ভোট নয় তা মানছেন অরবিন্দ ট্রাস্টের অনেক সদস্যই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথমে অরবিন্দ ভবনে গিয়ে ঋষি অরবিন্দের সমাধিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপর তিনি পুরো বাড়িটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে অমিতের হাতে অরবিন্দের বই ও ধূপকাঠি তুলে দেন ট্রাস্টের সদস্যরা। তারপর তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ অরবিন্দ চর্চা করেন অমিত। সেখানেই অরবিন্দের প্রতি অমিত প্রেমের কথা উঠে আসে। ট্রাস্টের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় অরবিন্দের দর্শন ও লেখা নিয়ে আলোচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অরবিন্দের অধ্যাত্মসাধন ও দার্শনিকতা নিয়ে তিনি যে অধ্যয়ন করেছেন সে কথাও জানিয়েছেন অমিত।’’ আরও যোগ করেন, ‘‘অরবিন্দ অমিতের পৈত্রিক বাড়িতে একবার গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি যে আসনে বসেছিলেন, সেই আসনটি এখনও তাঁর বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে। এ কথাও জানিয়েছেন বিজেপি-র এই নেতা।’’
অরবিন্দের জীবনী থেকে জানা যায়, তিনি বাংলার থেকে গুজরাতে বেশি দিন কাটিয়েছেন। অরবিন্দ গুজরাতে প্রায় ১৩ বছর ছিলেন। যেখানে বিদেশ থেকে আসার পর বাংলায় কাটিয়েছেন মাত্র ৫ বছর। অরবিন্দের এই জীবনেকেও হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূল যখন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের বহিরাগত তকমা দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ঋষি অরবিন্দের সঙ্গে গুজরাত যোগের কথা তুলে ধরছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির এক নেতার মতে, ‘‘ঋষি অরবিন্দ বাংলা ও ভারতকে আলাদা চোখে দেখতেন না। তিনি বিদেশে পড়াশোনা করার পরেও ভারতের সংস্কৃতি ও দর্শন নিয়ে গভীর আলোচনা করেছিলেন। ভারতের দর্শনকে চিনতে তিনি একাধিক রাজ্যে ভ্রমণ করেছিলেন। তার মধ্যে গুজরাতে সবথেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন। তাই আজকে যাঁরা গুজরাত থেকে কেউ এলে বহিরাগত বলছেন তাঁদের অরবিন্দের কাছ থেকে শিখতে হবে। ভারত এক, সেখানে বাংলা আলাদা নয়।’’
তবে ভোটমুখী বঙ্গে অমিত সফরের সারাদিনই ছিল হিন্দু মন জয়ের কর্মসূচিতে ভরা। সকালে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, দুপুরে কপিল মুনির আশ্রম আর সন্ধ্যায় ঋষি অরবিন্দের জন্মস্থান। একই দিনে তিনটি জায়গা পরিদর্শন করেন অমিত।