Budget 2020

শিক্ষায় লক্ষ কোটি টাকার ঢক্কানিনাদই সার 

২০১৯-২০ সালের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ৯৪,৮৫৪ কোটি টাকা।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৩
Share:

ছবি রয়টার্স।

প্রায় এক লক্ষ কোটি।

Advertisement

বাজেটে শিক্ষায় ৯৯,৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দকে এই মোড়কেই তুলে ধরছে কেন্দ্র। দাবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যতই শিক্ষায় অবহেলার অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামুন, বাজেটের খাতায় শিক্ষা খাতে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা তুলে রেখেছে মোদী সরকারই। কিন্তু হিসেব বলছে, বরাদ্দ বৃদ্ধি আসলে নামমাত্র। তা ছাড়া, ‘মেক ইন ইন্ডিয়ার’ মতো প্রকল্পে সাফল্যের মুখ দেখতে শিক্ষায় যত টাকা জোগানো জরুরি, ভারত তার ধারেকাছেও নেই বলে অনেক বিশেষজ্ঞের মত।

২০১৯-২০ সালের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ৯৪,৮৫৪ কোটি টাকা। তার থেকে এ বার বরাদ্দ বেড়েছে ৪,৪৪৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৪.৭%। অর্থাৎ, চলতি আর্থিক বছরের গড় মূল্যবৃদ্ধির হার যদি ৪ শতাংশও ধরা হয়, তা হলে প্রকৃত বরাদ্দ (মূল্যবৃদ্ধির হার বাদে নিট বৃদ্ধি) সে ভাবে বাড়েনি।

Advertisement

সহজ করে বুঝতে ধরা যাক, গত বার শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১০০ টাকা। শিক্ষকদের বেতন, পেনশন ইত্যাদি মিটিয়ে একখানি নতুন বেঞ্চ কেনা গিয়েছিল তাতে। এ বার বরাদ্দ ১০৪.৭ টাকা। কিন্তু ৪% মূল্যবৃদ্ধির অর্থ গত বারের ১০০ টাকা খরচও এ বার বেড়ে দাঁড়াবে ১০৪ টাকা। সুতরাং, বরাদ্দ ৪.৭ টাকা বাড়লেও, মাত্র ৭০ পয়সা নিট বাড়তি থাকবে হাতে। তাই লক্ষ কোটি টাকা শুনতে ভাল লাগলেও, বরাদ্দ বৃদ্ধি নামমাত্র বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

শিক্ষা-বাজেট কতখানি অপর্যাপ্ত, তা গবেষণাপত্রে তুলে ধরেছেন বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর বাজেট অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজের জ্যোৎস্না ঝা এবং মধুসূদন রাও। সিনিয়র রিসার্চ অ্যাডভাইজর মধুসূদন বলেন, ‘‘২০১৪-১৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ যেখানে মোট ব্যয়ের ৪.১৪% ছিল, সেখানে ২০২০-২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩.২৬%। ওই বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতেও ০.৫৩% থেকে নেমে হয়েছে ০.৪৪% (সবিস্তার সঙ্গের সারণিতে)।’’ অর্থাৎ, মোদী সরকার যতই শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজার কথা বলুক, ঘাটতি টাকা জোগানোতেই।

এমন নয় যে, ইউপিএ জমানায় বিপুল বরাদ্দ হত শিক্ষায়। বাজেট নথি অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ সালের মধ্যে তা ঘোরাফেরা করেছে জিডিপির ০.৬ থেকে ১.১ শতাংশে। ২০১১-১২ সালে ১%।

বিশেষজ্ঞদের আপত্তি মূলত দু’জায়গায়। প্রথমত, মোদী জমানায় জিডিপির সাপেক্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ কমেছে। অথচ উন্নত দুনিয়ায় শামিল হওয়ার দিকে পা-বাড়াতে, নিদেন পক্ষে চিনের মতো পড়শির সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণায় টক্কর দেওয়ার জন্যও ওই খাতে টাকা বাড়ানো জরুরি।

দ্বিতীয়ত, দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির প্রশ্ন, ‘‘সরকার মেক ইন ইন্ডিয়ার কথা বলে। এই বাজেটেও জোর দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাসেম্বল ইন ইন্ডিয়ার’ উপরে। অর্থাৎ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা যন্ত্রাংশ এ দেশে জুড়ে সারা দুনিয়ায় বিক্রি করাকে পাখির চোখ করছে কেন্দ্র। কিন্তু তার জন্য দক্ষ কর্মী জরুরি। শিক্ষায় বরাদ্দ পর্যাপ্ত না-হলে তা মিলবে কী ভাবে?’’

শুধু তা-ই নয়। কেন্দ্রের সঙ্গে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মিলিত বাজেটও জিডিপির ৪ শতাংশের বেশ খানিকটা নীচে। অথচ তা ৬ শতাংশে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা অনেক দিন ধরে বলা হচ্ছে। সেই লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে নীতি আয়োগও। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেও তা হওয়ার সম্ভাবনা কই?

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান তুলে দিব্যেন্দু দেখাচ্ছেন, ২০১২-১৩ সালে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে বাজেটে সামাজিক খাতে মোট ব্যয়ের ৪১.৬৬% শিক্ষা খাতে যেত। কিন্তু ২০১৯-২০ সালে তা নেমে এসেছে ৩৫.১৫ শতাংশে (সবিস্তার সঙ্গের সারণিতে)। তার থেকেও চিন্তার হল, বরাবরই ওই বরাদ্দের মোটা অংশ যায় বেতন-পেনশনের মতো বাঁধা খরচে। নতুন ক্লাসরুম, স্কুল, কলেজের মতো পরিকাঠামো গড়তে ১.৫ শতাংশও জোটে না। ফলে শিক্ষার পরিকাঠামো অপর্যাপ্তই থেকে যায়। হালে বাঁধা খরচে সামান্য কম অনুপাতে টাকা জোগানোও মূলত কম টাকায় আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে ‘কাজ চালিয়ে নেওয়ার’ কারণে বলে তাঁর দাবি। এই ছবি না-বদলালে শিল্প কিংবা অর্থনীতির ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে ওঠা কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement