ধনখড়। ফাইল চিত্র।
আবার মুখ্যমন্ত্রীকে পত্রাঘাত রাজ্যপালের। কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক বসানোর বিজ্ঞপ্তি জারি হল কার নির্দেশে এবং কোন প্রক্রিয়ায়? জানতে চেয়ে গত ৭ মে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেই চিঠির উত্তর এখনও পাননি বলেই এ দিন ফের পত্রাঘাত করলেন ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রীর আচরণকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘সংবিধানের সত্তা ও ভাবের বিরোধী’ বলে আখ্যা দিলেন তিনি।
৮ মে থেকে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেছে ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বাধীন প্রশাসক বোর্ড। ৬ মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই প্রশাসক বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সে দিনই রাজভবন থেকে চিঠি পাঠানো হয় রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে। কলকাতা পুরসভার বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত যে নেওয়া হয়েছে, তা রাজ্যপালকে কেন জানানো হয়নি, তা জানতে চেয়ে ওই চিঠি যায়। এই সিদ্ধান্ত কী প্রক্রিয়ায় গৃহীত হল এবং কার নির্দেশে হল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু রাজভবনের সে চিঠির কোনও জবাব মুখ্যসচিব দেননি।
পরের দিন আরও সক্রিয় হয় রাজভবন। রাজ্যপাল নিজেই চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজভবন থেকে আগের দিনই যে মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল এবং সে চিঠির জবাব যে মেলেনি, তা মুখ্যমন্ত্রীকে সে চিঠিতে জানান রাজ্যপাল। মুখ্যসচিব জবাব দিলেন না বলেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চাইতে হল বলেও জগদীপ ধনখড় লেখেন।
ধনখড়ের টুইট
এক সপ্তাহের মাথায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ফের চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রথমে মুখ্যসচিবকে এবং পরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্তের কথা জানতে চাওয়া সত্ত্বেও জবাব পাননি, সেই কারণেই এই চিঠি লিখতে হল— এ দিন লিখেছেন ধনখড়। ৬ মে তারিখে জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিটি, বিজ্ঞপ্তিটি জারি হওয়ার প্রক্রিয়া এবং কার নির্দেশে ওই পদক্ষেপ— এই তিনটি বিষয় তিনি জানতে চান বলে মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন লিখেছেন রাজ্যপাল।
আরও পডু়ন: পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনামূল্যে ২ মাস খাদ্য, হকারদের ঋণ, ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
৭ মে যে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছিলেন রাজ্যপাল, তাতে সংবিধানের ১৬৭ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাজ্যপালকে অবহিত করার দায়িত্ব যে মুখ্যমন্ত্রীর, তা রাজ্যপাল মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিনের চিঠিতে ফের ১৬৭ অনুচ্ছেদের কথা রাজ্যপাল উল্লেখ করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। ধনখড় লিখেছেন, ‘‘রাজ্যপালের প্রতি দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আপনার এই লাগাতার নীরবতা দুর্ভাগ্যজনক ও অনুচ্ছেদ ১৬৪-র শপথের পরিপন্থী এবং সংবিধানের সত্তা ও ভাবের বিরোধী, যা নিশ্চিতরূপে অসমর্থনীয়।’’
আরও পডু়ন: লন্ডনে সব আইনি রাস্তা প্রায় বন্ধ, বিজয় মাল্যর প্রত্যার্পণ কি সময়ের অপেক্ষা?
কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক বসানোর বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের এই দ্বিতীয় চিঠি পাওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি প্রতিক্রিয়ায় যেতে রাজি নয়। কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের ইস্যু যে হেতু ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছে, সে হেতু এখন আদালত ছাড়া আর কারও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে রাজ্যের শাসক দল মনে করছে না। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেনের কথায়, ‘‘এই বিষয় নিয়ে আমরা এখন কিছু বলব না। কারণ এটা এখন আদালতের বিচারাধীন বিষয়। রাজ্যপাল হন বা অন্য কেউ, আদালতের ঊর্ধ্বে তো কেউই নন। তাই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’