মেরে-কেটে গোটা পাঁচেক বাক্য। আমি সাজদা আহমেদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। সুলতান সাহেবের সঙ্গে সারা জীবন আপনারা ছিলেন। আমার পাশেও থাকবেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের বিকালে জয়পুরের অমরাগড়ি মাঠে মাইক হাতে তিনি যখন কথাক’টা বলছেন, বাচ্চা-বুড়ো-মহিলা তুমুল শোরগোল জুড়েছে। তারা প্রয়াত সুলতানের সহধর্মিনীকে নিয়ে উত্তেজিত নয়। ভিড় এসেছে তৃণমূলের তারকা-সাংসদ দেবকে দেখতে!
অকাল ভোটে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের ইতিউতি ঘুরলে মালুম হবে, সাজদা শুধুই প্রতীক। সহানুভূতির হাওয়া তুলতে যে প্রতীক ব্যবহার করতে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রয়াত সাংসদ সুলতানের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার সুযোগ সাজদাকে দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন তৃণমূলের বাকি নেতারা। সুলতানের বিধায়ক ভাই ইকবাল আহমেদ, তাঁর কাউন্সিলর কন্যা সানা, সুলতানের পুরনো নির্বাচনী এজেন্ট— গোটা বৃত্ত ঘিরে রেখেছে রাজনীতিতে নবাগতা সাজদাকে। রাজনীতির কথায় তাঁকে বিশেষ যেতে দেওয়াই হচ্ছে না! রাজ্যে ৩৪ বছর বামেদের অপশাসন ছিল আর এখন সাড়ে তিন বছর দেশে বিজেপি-র তাণ্ডব চলছে, এই রাজনৈতিক বার্তাটুকু তৃণমূলের অন্য সাংসদ-বিধায়কেরাই বলে দিচ্ছেন!
হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূলের এক নেতা বলছিলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী তো সড়গড় নন। কী হবে তাঁকে দিয়ে বাড়তি কথা বলিয়ে? ভোট তো করব আমরা!’’
এই ভোট করানো নিয়েই আশঙ্কায় বিজেপি-র অনুপম মল্লিক, সিপিএমের সাবিরউদ্দিন মোল্লা এবং কংগ্রেসের মুদস্সর ওয়ারসি। আমতায় মুকুল রায়ের সঙ্গে রোড-শো’র ফাঁকে অনুপম বলছিলেন, ‘‘ভোটটা করতে দিলে তৃণমূলের বিপদ আছে। আধা-সামরিক বাহিনী থাকবে ৩০ কোম্পানি। আমরা আরও বাহিনীর দাবি তুলেছি।’’ সাবির ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ঘরপোড়া প্রাণী, তাই এ বারও সিঁদূরে মেঘ দেখছেন! গঙ্গারামপুরে বিমান বসুর পদযাত্রা শুরুর আগে তাঁরও মন্তব্য, ‘‘শাসক দল হিসাবে সন্ত্রাস করার চেষ্টা ওদের সব সময় থাকবে। চেষ্টা করব রুখতে। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলেছি।’’
মূলত গ্রামীণ এই কেন্দ্রে হুগলির অপরূপা পোদ্দার, পশ্চিম মেদিনীপুরের দেব বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরা এসে বলে যাচ্ছেন, গ্রামবাংলার চেহারা বদলে দিয়েছে মমতার সরকার। তাঁদের বাসনা, ১ ফেব্রুয়ারি ভোটযন্ত্র খোলা হলে এমন উপহার নিয়ে যেতে, যাতে ২ তারিখ ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুব তৃণমূলের সমাবেশ বিজয়োৎসবের চেহারা নেয়! উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীন ৬ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়কই দলকে বলেছেন, দু’লক্ষের বেশি ভোটে সাজদা জিতবেন। আর ওই লোকসভার মধ্যে একমাত্র বিরোধী বিধায়ক, কংগ্রেসের অসিত মিত্র তাঁর দলের জন্য বিশেষ কিছু আশা দেখছেন না।
তৃণমূলের বদলে দেওয়ার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বিজেপি-র অনুপম অবশ্য বলছেন, ‘‘বদল মানে তো চারদিকে শুধু তোষণ আর তোষণ! সেই সঙ্গে দুর্নীতি।’’ মেরুকরণের অঙ্ক জোরালো করে ফেলতে পারলে বিজেপি-র যে ফায়দা, তা বুঝেই প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন উলুবেড়িয়া পুরসভার বিরোধী নেতা সাবির। মহল্লায় মহল্লায় সিপিএম প্রার্থী পাখিপড়া বোঝাচ্ছেন, ‘‘ধর্ম, সম্প্রদায় নয়। লড়াইটা রুটি-রুজির।’’
কে কী বুঝল, বোঝাবে ভোটযন্ত্র!