প্রতীকী চিত্র।
অনেক অধ্যক্ষেরই প্রশ্ন ছিল অনেক। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের সঙ্গে তাঁদের সোমবারের বৈঠকে স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষ এবং চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষার দায়িত্ব কার্যত কলেজগুলির উপরেই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, ইউজিসি-র নিয়মবিধি অবশ্যই মানতে হবে। সময়সীমা বদলাচ্ছে না। সেটা মাথায় রেখে কলেজগুলি কী ভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করবে, তা তারা বুঝে নিক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আগে স্থির করেছিল, পড়ুয়ারা বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর লিখে উত্তরপত্র ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে অথবা কলেজে গিয়ে হাতে হাতে জমা দেবেন। ইউজিসি পরে নির্দেশ দেয়, ২৪ ঘণ্টা নয়, দু’-তিন ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা নিতে হবে। প্রশ্নপত্র ডাউনলোড এবং উত্তরপত্র আপলোড করার জন্য খুব বেশি হলে আধ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। এ দিন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের বৈঠকে বহু অধ্যক্ষ প্রশ্ন তোলেন, বহু পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই। নেই দ্রুত গতির ইন্টারনেটের সুযোগ। আধ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র পাঠাবেন কী ভাবে? কিছু অধ্যক্ষ এর জন্য অন্তত দু’ঘণ্টা সময় চান। বেহালা বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেনের অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্যের প্রশ্ন ছিল, যে-সব পড়ুয়া মেল বা হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারবেন না, তাঁরা আধ ঘণ্টার মধ্যে কলেজে এসে উত্তরপত্র জমা দিতে না-পারলে কী হবে? সোমাদেবী পরে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, কলেজ-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝে নেবেন। তাঁরা প্রয়োজনে পড়ুয়ার বাড়ি থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানান, ইউজিসি-র নিয়ম মেনে পরীক্ষা হবে দু’ঘণ্টায়, বেলা ১২টা থেকে ২টো। উত্তরপত্র জমা দেওয়ার জন্য মিলবে আধ ঘণ্টা। প্রশ্নপত্রের ধরন বদলাচ্ছে না। কিছু অধ্যক্ষ এমসিকিউ-এর কথা বলেন, কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রশ্ন কমছে, বাড়ছে নম্বর। ছাত্রছাত্রীরা ‘এ-ফোর’ কাগজে উত্তর লিখবেন। রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পৃষ্ঠা-সংখ্যা লিখতে হবে সব পাতায়। পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন পাঠাবে অধ্যক্ষদের কাছে। অধ্যক্ষেরা নিজেদের কলেজের ওয়েবসাইটে তা আপলোড করবেন।
নিউ আলিপুর, সুরেন্দ্রনাথ, অ্যান্ড্রুজ কলেজের মতো বহু প্রতিষ্ঠান উত্তরপত্র জমা দিতে পৃথক পোর্টাল তৈরি করছে। ক্যানিংয়ের কাছে বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্র ই-মেল করলেই তা পৃথক পোর্টালে আপলোড করা হবে। সব পরীক্ষার্থীই প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে দু’ঘণ্টার মধ্যে লিখে কলেজে মেলে খাতা পাঠাতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি। পিডিএফ ফাইলে উত্তরপত্র পাঠানোর বিষয়ে শিক্ষকেরা এখন পরীক্ষার্থীদের তালিম দিচ্ছেন।
সাগর মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ প্রবীর খাটুয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ে যে-নির্দেশ দিয়েছে, সব পরীক্ষার্থীর কাছে ফোনে বা মেলে সেটা পাঠাতেই খুব অসুবিধা হবে। প্রয়োজনে জানিয়ে দিতে হবে বাড়ি-বাড়ি। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর জানান, পৃথক পোর্টালের জন্য তাঁদের প্রতিটি বিভাগকে দু’টি করে ই-মেল আইডি তৈরি করতে বলা হচ্ছে। একটি অনার্স, অন্যটি জেনারেলের জন্য। অনার্স পরীক্ষার্থীরা তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ই-মেল আইডিতে উত্তরপত্র পাঠাবেন। অন্য ই-মেল আইডিতে খাতা পাঠাবেন জেনারেলের পড়ুয়ারা। ‘‘যখন একটি ছাড়া আর কোনও পথ থাকে না, তখন সেই পথেই হাঁটতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি-র নিয়ম মেনে কতটা সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়, সেটাই চিন্তার বিষয়,’’ বলেন ইন্দ্রনীলবাবু।
রবীন্দ্রভারতীতে
ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থিয়োরেটিক্যাল পরীক্ষা দু’ঘণ্টায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার কর্মসমিতির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পরীক্ষা হবে মিশ্র (অফলাইন + অনলাইন) এবং ‘ওপেন বুক’ অথবা এমসিকিউ পদ্ধতিতে। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ডাউনলোড এবং উত্তরপত্র আপলোড করতে আধ ঘন্টা দেওয়া হবে। উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী জানান, দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত স্ক্রাইব-এর সাহায্য চাইতে পারেন। সব পরীক্ষা ১-১৮ অক্টোবরের মধ্যে হবে। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও ১৮ অক্টোবরের আগেই নেওয়া হবে।