নির্দেশিকা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফাইল চিত্র।
জাতীয় শিক্ষানীতির বিভিন্ন দিকের বিরুদ্ধে বাংলার শিক্ষা শিবির প্রথম থেকেই সরব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ বার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি’ বা বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার নির্দেশিকা জারি করায় তারও বিরোধিতা শুরু হয়েছে। অবশ্য শিক্ষা জগতের কেউ কেউ নতুন ব্যবস্থার যথাযথ রূপায়ণে পড়ুয়া সমাজের উপকারের সম্ভাবনাও দেখছেন।
এই বিষয়ে প্রকাশিত গাইডলাইন বা নির্দেশিকায় একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ তৈরি করে শিক্ষাদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গাইডলাইনে একাধিক কলেজ নিয়ে ‘ক্লাস্টার’ বা গুচ্ছ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এর ফলে পড়ুয়ারা একসঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন। এবং সেই পঠনপাঠন একাধিক কলেজে চালাতে পারবেন। পাবেন দ্বৈত ডিগ্রিও। এ ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের নম্বর প্রাপ্তির বিষয়টিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিট’ চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পড়ুয়ারা একটি কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দিন পড়ার পরে ছেড়ে অন্য জায়গায় ভর্তিরও সুযোগ পাবেন। পঠনপাঠনে অনলাইন এবং দূরশিক্ষাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতির অনুসারী এই নতুন নির্দেশিকায় উচ্চশিক্ষার সব প্রতিষ্ঠানকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১) বহুমুখী গবেষণা-ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। ২) বহুমুখী পঠনপাঠন-নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। ৩) নিজেরাই ডিগ্রি দিতে পারবে, এমন স্বশাসিত বহুমুখী কলেজ।
জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনার বহু আগে থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলে আসছেন, বিভিন্ন পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি নতুন তৈরি হওয়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দিকে পঠনপাঠন, গবেষণায় সহজে হাত বাড়ায়, তা হলে পড়ুয়ারাই উপকৃত হবেন। ইউজিসি-র নয়া নির্দেশ নিয়ে রবিবার তিনি বলেন, ‘‘যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত করতে পারলে আখেরে লাভ হবে পড়ুয়াদেরই।’’ কিন্তু এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধতাও প্রবল। কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বভারতীয় সংগঠন আইফুকটো-র সভাপতি এবং রাজ্য কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা বাস্তবায়িত হলে পড়ুয়ারা ‘জ্যাক অব অল ট্রেডস মাস্টার অব নানে’ (সব কাজ জানেন, কিন্তু কোনওটাতেই দক্ষ নন) পরিণত হবে।’’
সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘এর ফলে উচ্চশিক্ষায় তিন ধরনের নাগরিক তৈরি হবে। অনলাইন শিক্ষায় জোর দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছি।’’ তরুণকান্তি জানান, তাঁরা গুচ্ছ কলেজ তৈরির উদ্যোগ এবং অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিটেরও বিরোধী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি পার্থিব বসু বলেন, ‘‘এই ধরনের পরিকল্পনা করে কেন্দ্র গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ঘেঁটে দিতে চাইছে।’’