গাড়ি থেকে গুলি, দুই কিশোর খুনে ধৃত তৃণমূল নেতা

একটি টোটো আর একটি মোটরবাইককে পরপর ধাক্কা দেওয়া গাড়িটিকে আটকেছিলেন মালদহের ইংরেজবাজারের অরবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দারা। দেখা যায়, সেটি ইংরেজবাজারের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির গাড়ি। শুরু হয়ে যায় চিৎকার-চেঁচামেচি। কাচ তোলা গাড়ি থেকে তখনও কেউ বেরিয়ে আসেনি। হঠাৎ জনতার ভিতর থেকে গাড়ির কাচে ঢিল পড়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

নিহত অসীমের দুই ভাই এবং মা। নিজস্ব চিত্র

একটি টোটো আর একটি মোটরবাইককে পরপর ধাক্কা দেওয়া গাড়িটিকে আটকেছিলেন মালদহের ইংরেজবাজারের অরবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দারা। দেখা যায়, সেটি ইংরেজবাজারের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির গাড়ি। শুরু হয়ে যায় চিৎকার-চেঁচামেচি। কাচ তোলা গাড়ি থেকে তখনও কেউ বেরিয়ে আসেনি। হঠাৎ জনতার ভিতর থেকে গাড়ির কাচে ঢিল পড়ে।

Advertisement

এর পরেই গাড়ির চালকের আসনের কাচ নামে। বেরিয়ে আসে পিস্তলের নল। চলতে থাকে পরপর গুলি। দুই কিশোরের মাথায় গুলি লাগে। জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তেই গাড়িটি পালায়। অসীম মণ্ডল ও রাহুল পাসোয়ান নামে ওই দুই কিশোরকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অসীমকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় আনার পথে মারা যায় রাহুলও। দুই কিশোরকে খুনের অভিযোগে ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা এলাকার তৃণমূল নেতা পবিত্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাটি ঘটে এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ। গাড়ির সামনের আসনে চালকের পাশে বসে ছিলেন পবিত্রবাবু। তাঁর সরকারি গাড়িটিতে আরও তিন সঙ্গী ছিলেন। তাঁদের গাড়িটি প্রথমে নুনবহি এলাকায় টোটোটিকে ধাক্কা মারে। তার পর অরবিন্দনগর এলাকায় এসে ধাক্কা মারে মোরটবাইকটিকে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় পবিত্রবাবু দাবি করেছেন, জনতা যখন তাঁর গাড়িটি ঘিরে ঢিল-পাটকেল ছুড়ছিল, তখন আত্মরক্ষার্থে তিনি চালকের পাশের জানলা দিয়ে গুলি ছোড়েন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পবিত্রবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারাতেই মামলা করা হবে।’’

Advertisement

জেলার মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পবিত্রবাবু। দিন দুয়েক আগেই প্রকাশ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মালদহের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু ও সাবিত্রী মিত্র। এ দিন ফের ওই জেলাতেই তৃণমূলের পদাধিকারীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তি আরও বাড়ল শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের।

পবিত্রবাবুর পিস্তলটির লাইসেন্স রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একটি পেট্রোল পাম্প ও বেশ কিছু জমি-জায়গার মালিক পবিত্রবাবু তৃণমূলের দাপুটে নেতা বলেই এলাকায় পরিচিত। বছরখানেক আগে ইংরেজবাজার ব্লকের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁকে তখন গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন নিয়েছিলেন।

এ দিনের ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ বসে থাকবে না। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাসপাতালে চলে যান কৃষ্ণেন্দুবাবুও। সেখানে তিনিও বলেন, ‘‘কেউ পার পাবে না।’’ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পবিত্রবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে গাড়িটি কেউ ইংরেজবাজার থানা চত্বরে রেখে এসেছিল। নিহত দুই কিশোরেরই বাড়ি স্থানীয় কুলিপাড়ায়। দু’জনেরই বয়স ১৬। অসীম বিদ্যুৎ-মিস্ত্রির কাজ করত। তারা চার ভাই। বাবা দিনমজুর। রাহুল, তার বাবা অখিল পাসোয়ান, দাদা অর্জুন ও মা— সকলেই দিনমজুর। বাবা-মা এখন দিল্লিতে মেয়ের কাছে রয়েছেন। রাহুল ছিল দাদার বাড়িতে। গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনার পর কৃষ্ণেন্দুবাবু জানিয়েছিলেন, রাহুলের চিকিৎসার সব দায় নেবে সরকার। যদিও তার আর প্রয়োজন পড়েনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement