স্কুল খুলবে
Offline class

Home Tution: বাড়ির চাতালে ক’জনকে পড়াতে শুরু করেছিলাম

এমনই এলোমেলো পরিস্থিতিতে এক সময়ে ঠিক করি, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

Advertisement

অর্ক্যতনু মান্না

মৌসুনি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৪
Share:

গণিতের শিক্ষক অর্ক্যতনু মান্না (বাঁ দিকে) ও বাংলার শিক্ষক বাসুদেব দলপতি । নিজস্ব চিত্র।

নিয়মিত চর্চায় না থাকলে বিদ্যার ধার কমে যেতে বাধ্য। সে কথা ভেবে স্কুল বন্ধ থাকলেও অফলাইন পড়ানোটা চালিয়ে যাব ভেবেছিলাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েত নদী-সমুদ্রে ঘেরা একটা দ্বীপ। আমাদের স্কুলটা সেখানেই। বেশিরভাগ গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে। সকলের স্মার্টফোন নেই। যাদের আছে, দ্বীপভূমির দুর্বল ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য অনলাইন ক্লাস করানো সহজ ছিল না।

Advertisement

এর মধ্যে আবার আমপান-ইয়াসের দাপট গিয়েছে। ইয়াসে বাঁধ ভেঙে কার্যত গোটা দ্বীপ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বহু ছাত্রছাত্রীর পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল এই স্কুলে। জল নেমে গেলেও বহুদিন পর্যন্ত ত্রাণশিবিরে চলত খাওয়া-দাওয়া। এই পরিস্থিতিতে কে ভাববে অনলাইন ক্লাসের কথা! তা ছাড়া, অনেকের তো জলোচ্ছ্বাসে বইখাতাই তলিয়ে গিয়েছিল।

এমনই এলোমেলো পরিস্থিতিতে এক সময়ে ঠিক করি, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। এক জায়গায় বসিয়ে অন্তত অঙ্কটা যদি করাতে পারি, তা হলে ভাল হয়।

Advertisement

মাস কয়েক আগে সকলকে ফোন করতে শুরু করি। অষ্টম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শ’খানেক ছেলেমেয়ে আমাদের স্কুলে। ফোনের ও প্রান্ত থেকে অনেক অভিভাবক জানালেন, ভিন্‌ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছেন। তবে ছেলেমেয়ে গ্রামের বাড়িতে আছে অনেকের। ঠিকানা জোগাড় করে যোগাযোগ শুরু করলাম। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জনা কুড়ি পড়ুয়া জুটেও গেল। দেখলাম, সকলেই নতুন করে পড়াশোনা শুরু করতে চায়।

মৌসুনি পৌঁছতে হলে আমাকে নামখানার বাড়ি থেকে নদী পেরিয়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার যেতে হয়। ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেখে মনে হল, ঠিক পথেই এগোচ্ছি। কখনও কারও বাড়ির বারান্দায়, কখনও দোকানের চাতালে বসে পড়ানো শুরু করলাম ওদের। এদের মধ্যে কয়েকজন যথেষ্ট মেধাবী। অনেক সময়ে ওদের কাউকে কাউকে নিজের বাড়িতে ডেকেও পড়িয়েছি।

আমার সহকর্মী বাসুদেব দলপতি বাংলা পড়ান। নামখানার শিবনগর আবাদ গ্রাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তিনিও চলে আসতেন ক্লাস করাতে। কিন্তু এ ভাবে কি আর সব বিষয়ে ঠিকমতো পড়ানো সম্ভব! স্কুল যত দ্রুত চালু করা যাবে, ততই ভাল— বেশ বুঝতে পারছিলাম আমরা সকলেই।

খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, অনেক ছেলেমেয়ে নাকি কাজেকর্মে ঢুকে পড়েছে। ১৬ তারিখের পরে বোঝা যাবে, ঠিক কতজন স্কুলছুট হল।

লেখক গণিতের শিক্ষক, মৌসুনি কো-অপারেটিভ হাইস্কুল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement