স্কুলের ছাত্রাবাসেই থাকত দুই বন্ধু। প্রতীকী ছবি।
মোবাইল চাই। টাকা রোজগার করতে স্কুলের ছাত্রাবাস থেকে তাই পালাল নবম শ্রেণির দুই পড়ুয়া। কাজ নিল হোটেলে। এক ছাত্র মাকে আশ্বস্ত করে বলল, “ভালই আছি আমরা। বেতন পেলে মোবাইল কিনে তবেই বাড়ি ফিরব।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই এলাকার দুই ছাত্র। দু’জনেই পড়ে এক স্কুলে। স্কুলের ছাত্রাবাসেই থাকত দুই বন্ধু। ২০২০ সালে লকডাউনের মাস তিনেক আগে ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল একজন। আর লকডাউন পর্ব কাটিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয় অন্যজন। দিনকয়েক আগে ছুটি নিয়ে দু’জনেই বাড়িতে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তারা ছাত্রাবাসে ফেরে। বুধবার সন্ধ্যায় জামা সেলাই করতে যাবে বলে ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে যায় দু’জন। তারপর খোঁজ নেই।
মঙ্গলবার থানায় যান ওই দুই ছাত্রের অভিভাবক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার পরেই এক ছাত্র একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে তার দিদিকে। ওই ফোনেই মা-কে ‘কনফারেন্সে’ নেয় ওই ছাত্রের দিদি। থানায় উপস্থিত সকলের সামনেই ফোনের ‘স্পিকার অন’ করা হয়। ছাত্রটি জানায়, দুই সহপাঠী একসঙ্গেই আছে। বিভিন্ন হোটেলে কাজ করছে। টাকা রোজগার করে মোবাইল কিনে তবেই ফিরবে। পুলিশ জানিয়েছে, দুই পড়ুয়ার খোঁজ চলছে। যেখান থেকে ফোন এসেছিল সেই লোকেশন খুঁজে পুলিশের দল রওনা দিয়েছে।
মোবাইলে আসক্তি নতুন নয়। মোবাইল না পেয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভার্চুয়াল জগতের মোহে যে ভাবে দুই কিশোর অর্থ রোজগার শুরু করল এমন নজির খুব একটা দেখা যায়নি। শিক্ষকদের একাংশের মতে, লকডাউনে মোবাইলের প্রতি আসক্তি বেড়েছে পড়ুয়াদের। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “দীর্ঘদিন লকডাউনে যে এই দুই ছাত্র পড়াশোনা করেনি সেটা স্কুল খোলার পরে ওদের মনসংযোগের অভাবে প্রমাণ পেয়েছি। আমার স্কুলের অন্য আবাসিক পড়ুয়ারা ওদের অনুসরণও করতে পারে।” খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমেন সামন্ত বলেন, “এটা টিন এজ ডিপ্রেশন বা অ্যানটি-সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার থেকে হতে পারে। সংসারের চাহিদা মেটাতে নয়, মোবাইলের জন্য ওরা রোজগার করতে যাচ্ছে। সমাজ কী ভাবল, পরোয়া করছে না। লকডাউনের পরে ফের শৃঙ্খলার জীবনে ফেরা ওরা মানতে পারছে না। তবে কাউন্সেলিংয়ে এই আসক্তি কাটানো সম্ভব।”
এক ছাত্রের বাবা এই বিষয়ে কথা বলতে চাননি। আর অন্য জনের বাবার বক্তব্য বলেন, ‘‘খোঁজ করলে আরও দূরে চলে যাবে। দু’মাস কাজ করে টাকা পেলে মোবাইল কিনে বাড়ি ফিরবে।”