প্রতীকী ছবি।
স্বাস্থ্য দফতরের ‘চোখের আলো’ প্রকল্পের আওতায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ছানি অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েছিলেন ওঁরা ২৮ জন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর। অস্ত্রোপচারের পরে ৯ জনের চোখে সংক্রমণ ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার ‘রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তে তাঁদের চিকিৎসা হয়। সাত জন সুস্থ হলেও দু’জনের একটি করে চোখ কার্যত দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে বলেই সূত্রের খবর।
বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা এই দু’জনই চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ। মুখ্যমন্ত্রীর নামকরণ করা এই প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যভবনে বিশেষ বৈঠকও হয়েছে। সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে এই অস্ত্রোপচারের জন্য আগের দিন ভর্তি হতে হবে। আরও কয়েকটি সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে, যাতে পরে এমন ঘটনা আটকানো সম্ভব হয়।
ওই দু’জনের চোখের অবস্থা এখন কেমন? আরআইও-র অধিকর্তা অসীম ঘোষের কথায়, ‘‘যে ন’জনকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সাত জন চিকিৎসায় ভাল সাড়া দেন। চিকিৎসার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা বাড়িও চলে যান। কিন্তু দু’জনের চোখে দৃষ্টি ফেরেনি বললেই চলে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত চোখে শুধু হালকা আলোর রেখা দেখছেন। চিকিৎসা পরিভাষায় বলা যায়, ওঁদের চোখে মাত্র ১০ শতাংশ দৃষ্টি আছে। ওই দু’জনকে ফলো আপে রাখা হয়েছে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, কোনও নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোয় বিশিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে ছানি কাটিয়ে যদি এই হাল হয়, তা হলে মানুষ কোন ভরসায় সেখানে যাবেন? সরকারি প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতাই বা কতটা থাকবে? বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘কেন এমন হল, তা তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। এ বার যা বলার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ একই বক্তব্য বর্ধমান মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগের প্রধান মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কাছে তথ্য নেই। তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে সরকার ওই রোগীদের চিকিৎসার সব রকম দায়িত্ব নেবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের পরিকাঠামো অত্যন্ত ভাল।’’
সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পর স্বাস্থ্যভবন চক্ষু বিশেষজ্ঞদের জরুরি বৈঠক ডাকে। তাতে অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান অজয় দে। তাঁর কথায়, ‘‘একই জায়গায়, একই বেডে দু’জন রোগী ভাল রইলেন আর তিন জন খারাপ হলেন— ছানি অপারেশনে কিছু ক্ষেত্রে এই রকম হয়ে থাকে।’’ সূত্রের খবর, বর্ধমানের ঘটনার পরে সরকারি ক্ষেত্রে ছানি অস্ত্রোপচারের জন্য আরআইও-র বিশেষজ্ঞদের তরফে বেশ কিছু নির্দেশিকা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। অসীম ঘোষ জানান, এ বার থেকে ছানি কাটানোর জন্য রোগীকে আগের দিন ভর্তি হতে হবে। তাঁকে সারা দিন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। নেত্রনালির সংক্রমণ আছে কি না, এবং রক্তচাপ ও সুগার কত, সব পরীক্ষা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই ব্যাপারে প্রশিক্ষিত ওটি নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের রাখতে হবে। চোখে ড্রপ দেওয়ার সময় শিশির মুখে যেন হাত না থাকে, সেটাও দেখতে হবে। যে ফ্লুইড দিয়ে চোখ ধোয়া হবে তা, কাচের বোতলে রাখতে হবে এবং ‘অটোক্লেভ’ করতে হবে।