ঠান্ডার মধ্যে রাত কাটাতে বাধ্য হলেন কয়েকশো পুণ্যার্থী। প্রতীকী ছবি।
ঘন কুয়াশায় দিক ভুলে নদীর চরায় আটকে গেল দু’টি যাত্রিবাহী ভেসেল। মাঝনদীতে রাতভর আটকে থাকতে হয় গঙ্গাসাগর-ফেরত কয়েকশো যাত্রীকে। কুয়াশার জেরে ভেসেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অন্য পুণ্যার্থীদেরও।
রবিবার রাতে কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে তিনটি ভেসেল কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটের দিকে রওনা দেয়। একটি ভেসেল সময় মতো পৌঁছলেও বাকি দু’টির খোঁজ মিলছিল না। পরে জানা যায়, কুয়াশায় পথ হারিয়ে ঘোড়ামারা দ্বীপের দিকে চলে যায় ভেসেল দু’টি। নদীর চরে আটকে পড়ে। মাঝনদীতে ভেসেলের ভিতরে গাদাগাদি ভিড়ে, ঠান্ডার মধ্যে রাত কাটাতে বাধ্য হন কয়েকশো পুণ্যার্থী। পর্যাপ্ত খাবার ও জল না থাকায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সোমবার সকালে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের ছোট নৌকাও পৌঁছয়। পুণ্যার্থীদের জল ও খাবার দেওয়া হয়। চিকিৎসক দল অসুস্থদের পরিষেবা দেয়।
ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় প্রায় ৬০০ পুণ্যর্থীকে উদ্ধার করে কাকদ্বীপ লট-৮ ঘাটে নিয়ে আসা হয়। বিকেলে পুণ্যার্থীদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে প্রশাসন। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা প্রশাসন, পুলিশ, উপকূলরক্ষী বাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী, বিপর্যয় মোকাবিলা দল— সকলের চেষ্টায় সুস্থ অবস্থায় সকলকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।” ঘন কুয়াশায় রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত ভেসেল পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয় মুড়িগঙ্গায়। সাগর থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিপাকে পড়েন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। ভেসেল না চলায় কচুবেড়িয়া ঘাটে প্রচুর যাত্রী জড়ো হন। সকালে গঙ্গাসাগর থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত বাস পরিষেবাও বন্ধ রাখা হয়। অনেকে গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ড থেকে হেঁটে কচুবেড়িয়ার দিকে রওনা দেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সরকারি ভাবে আজ, মঙ্গলবার শেষ হবে মেলা। তবে সোমবার থেকেই মেলা প্রাঙ্গণ সাফ করতে নেমে পড়েছেন হাজার পাঁচেক স্বেচ্ছাসেবক। ১০ দিন ধরে সাফাই অভিযান চলবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
ঝাড়ু হাতে এ দিন সমুদ্রসৈকতে দেখা গেল মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায়, বঙ্কিম হাজরাদের। ছিলেন জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। বঙ্কিম বলেন, “মেলা শুরুর আগেই বলেছিলাম, সমুদ্রতট আগের মতো পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হবে। সেই কাজ শুরু হয়েছে। এ বার মেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই মতো কাউকে প্লাস্টিক নিয়ে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।” এ দিকে, এ দিনও গঙ্গাসাগরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এক পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা ওই পুণ্যার্থীর নাম অরবিন্দকুমার পান্ডে (৫৬)।