এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মঙ্গলবারই কলকাতার সরশুনার একটি স্কুলের পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার টাকা না ঢোকার অভিযোগ উঠেছিল। সেই টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে না ঢুকে চলে গিয়েছিল অন্যত্র! সেই অভিযোগে এ বার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে গ্রেফতার দুই জন। ধৃতেরা পেশায় এক জন কৃষক, অন্য জন চা শ্রমিক। কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের ধরল ইসলামপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম কৃষ্ণপদ বর্মণ এবং সরিফুল ইসলাম। দু’জনের বাড়িই চোপড়া থানার দাসপাড়া এলাকায়। এক জন চা শ্রমিক, অপর জন কৃষক। সূত্রের খবর, তাঁরা দু’জনেই সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে জালিয়াতি করেছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সরশুনা থানায় একটি স্কুলের তরফে অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওই স্কুলের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ৩১ জন পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি। সেই টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। কোথায় টাকা গেল, সেই তদন্ত করতে গিয়েই উঠে আসে কৃষ্ণপদ এবং সরিফুলের নাম। অভিযুক্তদের পরিচয় জানার পরই তদন্তকারীরা যোগাযোগ করে ইসলামপুর থানার সঙ্গে। গোয়েন্দা বিভাগের থেকে খবর পেয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত।
প্রসঙ্গত, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কিনতে, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পড়ুয়াপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়া নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক। শুরুটা হয়েছিল পূর্ব বর্ধমান জেলায়। গত কয়েক দিন ধরেই ট্যাবের টাকা নিয়ে নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। অভিযোগ, ৩০০-র বেশি পড়ুয়ার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। কোথাও কোথাও আবার অভিযোগ, এক জনের টাকা চলে গিয়েছে অন্য জনের অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়াও, ‘হ্যাক’ করে ট্যাবের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তী কালে সেই অভিযোগ ওঠে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে।
পূর্ব মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কলকাতা— বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা ট্যাবের টাকা না পাওয়ায় অস্বস্তিতে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়েও। বিতর্কের মধ্যেই শিক্ষা দফতর ট্যাবের টাকা সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। কেন আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঠিকমতো টাকা ঢুকছে না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা দফতর। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই পুলিশ মোট ১০ জন গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা। বাকিরা মালদহের। সকলের সঙ্গেই কোনও না কোনও ভাবে সাইবার ক্যাফের যোগ আছে। মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকেই জালিয়াতির জাল বিস্তার হয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্যে আর কারা কারা আছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এই ঘটনায় বিহারের জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ রয়েছে বলেও সন্দেহ তদন্তকারীদের।