নবান্ন অভিযানের দিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। — ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে মোট ১৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযানের ডাক দেওয়া ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর অন্যতম দুই আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ী এবং শুভঙ্কর হালদারকে। তাঁদের ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে ময়দান থানায় অভিযোগ হয়েছে। নবান্ন অভিযানে ময়দান থানা ছাড়াও মুচিপাড়া, আর্মহার্স্ট স্ট্রিট, আলিপুর, বড়বাজার, জোড়াসাঁকো, হেয়ার স্ট্রিট, নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হেস্টিংস থানায় দু’টি এবং দক্ষিণ বন্দর (সাউথ পোর্ট) থানায় ৩টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। অভিযানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠে। পুলিশের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। পাল্টা জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় ধরপাকড়ও চলে। মঙ্গলবার রাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর অন্যতম আহ্বায়ক সায়নকে ‘তুলে নিয়ে গিয়েছে’ পুলিশ। ধৃত সায়ন এবং শুভঙ্করকে বুধবার আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ময়দান থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৮৯ (২) (বেআইনি জমায়েত), ১৯১ (৩) (দাঙ্গা, অস্ত্র রাখা), ১৯০ (বেআইনি জমায়েতে শামিল প্রত্যেকে একই উদ্দেশ্যে অপরাধ সংগঠিত করা)-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানের আগের দিন, সোমবার পুলিশ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা অভিযান ঘিরে তারা অশান্তির আশঙ্কা করছে। তাদের হাতে আসা বেশ কিছু ‘সূত্র’ সে দিকেই ইঙ্গিত করছিল বলেই জানানো হয়। সেই সমস্ত ‘সূত্রে’রই একটি ছিল ‘ছাত্র সমাজ’-এর প্রতিনিধির সঙ্গে কলকাতার এক বিলাসবহুল হোটেলে এক রাজনৈতিক নেতার সাক্ষাৎ। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ওই সাক্ষাৎ প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘রবিবার অর্থাৎ ২৫ অগস্ট সকাল ১১টা বেজে ২৫ মিনিটে হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে প্রবেশ করেন ছাত্র সমাজের অন্যতম আহ্বায়ক। তাঁর নাম করব না। কিন্তু তিনি অনেক কিছুই বলে বেড়াচ্ছেন। একটু আগেও সাংবাদিক বৈঠক করে অনেক কিছু বলেছেন।’’
ঘটনাচক্রে, এডিজির ওই সাংবাদিক বৈঠকের আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম আহ্বায়ক সায়ন এবং শুভঙ্করেরা। সুপ্রতিম জানান, ছাত্রনেতা যে হোটেলে প্রবেশ করছেন, সেই সিসিটিভি ফুটেজও আছে পুলিশের কাছে। তবে তাঁর নাম তিনি নেবেন না। পুলিশ এ-ও জানায়, যে কেউ স্বাধীন ভাবে যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘নবান্ন অভিযানের মূল হোতা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা যেখানে নিজেদের সাধারণ ঘরের সন্তান বলে দাবি করছেন, সেখানে তাঁদের এক জনের হঠাৎ এই আবহেই শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে যাওয়া এবং রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ কি কেবলই সমাপতন?’’ মঙ্গলবার রাতে সুকান্ত দাবি করেন, সায়নকে ‘তুলে নিয়ে গিয়েছে’ পুলিশ। বুধবার কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সায়ন এবং শুভঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত দু’জনকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে কলকাতা পুলিশ জানায়, নবান্ন অভিযানে মোট ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে, কলকাতা পুলিশ মোট ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ এবং ২৩ জন মহিলা রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃতের সংখ্যা ৯৪। পাশাপাশি, ১৫ জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) । বুধবার কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, নবান্ন অভিযানে তারা মোট ১৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।