দাবি ছিলই। সঙ্গে ছিল জল্পনাও। অবশেষে সেটাই সত্যি হতে চলেছে। শন্তিনিকেতন ও তারাপীঠে জেলার দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দু’টি পূর্ণাঙ্গ থানা করার অনুমোদন মিলেছে। বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক অশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় এ কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। থানা দু’টি চালু হওয়ার পর অনেক সুবিধা হবে।’’ কিন্তু ঠিক কবে থেকে থানা শুরু হচ্ছে এবং নতুন থানাগুলিতে পুলিশ কর্মীর বিন্যাস ঠিক কেমন হবে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি মন্ত্রী। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘এখনও নির্দেশ হাতে এসে পৌঁছয়নি। নির্দেশ পেলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
কেন থানার প্রয়োজন ছিল শান্তিনিকেতনে? জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত আন্তর্জাতিক শহর শান্তিনিকেতন। এখানে হেরিটেজ বিল্ডি-সহ প্রচুর অমূল্য সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। প্রতিনিয়ত বহু পর্যটক থেকে ভিভিআইপিদের যাতায়াত রয়েছে এখানে। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়াও পুলিশেরই কাজ। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রী রয়েছে। রয়েছে অনেকগুলি ছাত্রাবাস। সাম্প্রতিক অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পডু়য়াদের নিয়ে নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়। তাতে পুলিশকেও নামতে হয়। বোলপুর থানার অর্ন্তগত এই এলাকা এতদিন শান্তিনিকেতন তদন্তকেন্দ্র দেখাশোনা করছে। বিশ্বভারতী ছাড়াও এই তদন্তকেন্দ্রকে কোপাই, কঙ্কালীতলা, রূপপুর পঞ্চায়েত এলাকাও দেখতে হয়। এ ছাড়া ফুলডাঙা পুলিশ ক্যাম্প এবং প্রান্তিক পুলিশ ফাঁড়ি সবই শান্তিনিকেতন তদন্তকেন্দ্রের অন্তর্গত। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মীর অভাবে সব ঠিকমতো দেখভাল করা বা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পূর্ণাঙ্গ থানার দাবি দীর্ঘদিনের। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিও। কমিটির পক্ষে অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য, আনন্দ দুলাল মিত্র ও দেবব্রত হাজারিরা বলছেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে পূর্ণাঙ্গ থানা তৈরি হলে অবশ্যই রক্ষাণাবেক্ষণ ও যে কোনও ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ সুচারু ভাবে এবং অনেক দ্রুততার সঙ্গে হবে বলেই মনে করি।’’
অন্যদিকে তারাপীঠ রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত পীঠস্থান বা পর্যটন স্থল। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার পূর্ণ্যার্থী ও পর্যটক আসেন। সে জন্য তৈরি হয়েছে ৪০০-র বেশি লজ-হোটেল। কিন্তু বাইরে থেকে আসা এত মানুষের ভিড়ে নির্বিঘ্নে গা ঢাকা দিয়ে থাকছে দুষ্কৃতীরাও। বহু অপরাধের ছকও তারাপীঠের হোটেল বা লজে বসে করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন হোটেল থেকে অপরাধীদের গ্রেফতারির ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বিশ্বভারতীর মতো এখানেও বছরভর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। রামপুরহাট থানার অধীনে এখানে একটি ফাঁড়ি থাকলেও ভালই চাপ পড়ছিল পুলিশের উপরে। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলায় খুশি তারামাতা সেবাইত কমিটি। কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘থানা হলে একদিকে এখানে আগত পর্যটকেরা নিরাপত্তা পাবেন এবং অপরাধ প্রবণতাও কমবে। তেমনই সুবিধা পাবেন এলাকায় মানুষও।’’