সামনাসামনি: দাড়িভিট কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের ধিক্কার মিছিলের সামনেই পড়ে গেল পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সভার প্রচারে তৃণমূলের মিছিল। তৃণমূল সরে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার দাড়িভিট বাজারে। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে। তার মুখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দাড়িভিট। সেখানে সভা করা নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ৬ জানুয়ারি দাড়িভিটে সভা করার কথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত দুই যুবকের পরিবার অবশ্য আগেই বলে দিয়েছে, এই সভা তাঁরা করতে দেবেন না। বৃহস্পতিবার ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে এলাকায় ধিক্কার মিছিল করেন তাঁরা। শুভেন্দুর সভার প্রচারে মিছিল করছিল তৃণমূলও। দু’টি মিছিল মুখোমুখি হয়ে পড়ে। তা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে দাড়িভিট।
নিহতদের পরিবারের লোকজনের দাবি, দাড়িভিট কাণ্ডে জেলার যে স্কুল পরিদর্শককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তাঁর শাপমোচন ঘটানো অন্যায় হয়েছে। সেই পরিদর্শকের উপর থেকে সাসপেনসন তুলে নিয়ে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। নিহতদের পরিবার রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তাই তাঁরা এ দিনের মিছিলকে ধিক্কার মিছিল নামেও অভিহিত করেন।
ওই দুই পরিবার স্কুলের মাঠে মঞ্চ বেঁধে বসে রয়েছে। সেই কারণেই তৃণমূল শুভেন্দুর সভার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছে না। মঞ্চ বাঁধার কাজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। সম্প্রতি শুভেন্দুর সভার মঞ্চের মাপজোক করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় তৃণমূল কর্মীদের। পুলিশ নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে গেলে তাদেরও বাধার মুখে পড়তে হয়।
এ দিনই অবশ্য হাইকোর্ট স্কুলে পড়াশোনা স্বাভাবিক করতে বলেছে। স্কুলে পুলিশ পিকেটও বসাতে বলেছে। সেক্ষেত্রে এ বার নিহতদের পরিবারকে পিছু হঠতে হবে বলে তৃণমূলের কিছু নেতাদের ধারণা।
তবে নিহতের পরিবারের লোকজন ও বাসিন্দাদের একাংশ এ দিনও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলকে ওই মাঠে সভা করতে দেওয়া হবে না।
এ দিন মিছিল ঘিরে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর দাড়িভিটে পরিবহণমন্ত্রীর সভা ঘিরেও প্রচুর পুলিশ থাকবে। দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৬ জন ডিএসপি, প্রায় ১৬ জন ইন্সপেক্টর, ৫০-এর বেশি সাব-ইন্সপেক্টর, প্রচুর পুলিশ থাকবে। তৃণমূলের দাড়িভিট অঞ্চল কমিটির সভাপতি সুবোধ মজুমদার বলেন, ‘‘শুভেন্দুর সভা দাড়িভিট মাঠেই হবে। ব্রিগেডের প্রচারে ব্লকের ওই সভায় কোনও বাধাই মানা হবে না।’’
সভা হওয়ার কথা সিপিএমেরও। ১৯ জানুয়ারি আসার কথা সীতারাম ইয়েচুরির। সে সভা কীভাবে হবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের দাবি, ‘‘নিহতদের পরিবারের লোকেরা সুবিচার চাইছেন। আমরাও চাই দুই ছাত্রকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাই নিহতদের পরিবারের লোকজন ও বাসিন্দারা সিপিএমকে সভা করতে বাধা দেবেন না বলেই আমরা আশাবাদী।’’ তাদের অভিযোগ, সাড়ে তিন মাস গড়াতে চললেও দুই ছাত্রকে খুনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়ে থাকলে সিআইডি কখনওই পুলিশকে গ্রেফতার করবে না। সিবিআই তদন্তের উপরেও তাঁদের ভরসা নেই। সিপিএমের দাবি, ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবারের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে ওই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘গত তিন মাসে প্রশাসন ও তৃণমূল দাড়িভিটে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। সিপিএম ও বিজেপি একজোট হয়ে দাড়িভিটে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর দাবি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সভা করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু দাড়িভিটের মানুষ চাইলে তবেই সভা সম্ভব।