ice cream

Summer Vacation: দিনে আয় ১০০ টাকারও কম, স্কুলের লম্বা ছুটিতে আইসক্রিম বেচে সংসার টানছে দুই কিশোর

মহিষাদলের রামবাগে বাড়ি দেব ও জাহিরের। দেবের বাবা ঘুগনির দোকানে কাজ করেন। বাড়িতে বাবা-মা, দু’ভাই।

Advertisement

সৌমেন মণ্ডল

মহিষাদল শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ০৬:৪২
Share:

সবুজসাথীর সাইকেলে চেপেই আইসক্রিম বিক্রি। গ্রামের পথে জাহির (লাল-নীল জামা) ও দেব (হলুদ জামা)। নিজস্ব চিত্র।

সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে গুটিগুটি ঘরে ফেরে ওরা। দিনভর পরিশ্রমের রোজগারটুকু তুলে দেয় মা-বাবার হাতে। তারপর ইচ্ছে থাকলেও পড়ার শক্তি থাকে না। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দুই কিশোর। দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। করোনায় রাশের পরে স্কুল খোলায় পড়াশোনা আবার শুরু হয়েছিল। সেই সঙ্গে জুটছিল একবেলা রান্না করা খাবার। কিন্তু গরমের জন্য আবার স্কুলে লম্বা ছুটি। অভাবের সংসারে একটু সুরাহা করতে পড়ার ফাঁকে তাই এখন আইসক্রিম বিক্রি করছে দেব আর জাহির। দু’জনেই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের নাটশাল হাইস্কুলের ছাত্র। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে দেব পাত্র। আর জাহির নবম শ্রেণির ছাত্র।

Advertisement

মহিষাদলের রামবাগে বাড়ি দেব ও জাহিরের। দেবের বাবা ঘুগনির দোকানে কাজ করেন। বাড়িতে বাবা-মা, দু’ভাই। জাহিরের বাবা মারা গিয়েছেন বছরখানেক হল। বাড়িতে দুই বোন, এক ভাই ও মা। দু’জনের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। অভাবের সংসারে যাতে দু’পয়সা আসে সে জন্যই সাইকেলের পিছনে থার্মোকলের বাক্সে আইসক্রিম নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করছে এই দুই কিশোর। তবে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেয়নি তারা। পড়াশোনা করে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই প্রতিদিন সকাল ৯টা বাজতে না বাজতেই আইসক্রিম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ছে। দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা মতো রোজগার হয়।

জাহিরের মা গুলশন বিবি বলছেন, ‘‘সংসার কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। তাই ছেলেকে আইসক্রিম বিক্রি করতে পাঠাই।’’ দেবের মা পুতুল পাত্রের কথায়, ‘‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলে না। তাই ছুটির কয়েক দিন ছেলেকে আইসক্রিম বিক্রি করতে পাঠাচ্ছি। বর্ষা এসে গেলে তো আর আইসক্রিম বিক্রি হবে না।’’ দেব বা জাহিরের এই অবস্থার কথা অবশ্য স্কুল জানে না। নাটশাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্রনারায়ণ পন্ডা বলেন, ‘‘আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা কোনও ছাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে তা বিবেচনা করে দেখা হয়। তবে গরমের ছুটিতে কোন ছাত্র কী করছে তা বলতে পারব না।’’

Advertisement

দুই কিশোর অবশ্য পড়াশোনা করেই দিন বদলাতে চায়। দেব বলছিল, ‘‘বাবার আয়ে সংসার চলে না। তাই পড়ার ফাঁকে আইসক্রিম বিক্রি করি। নিজে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইদেরও তো পড়াতে হবে।’’ জাহিরের কথায়, ‘‘অনেক দূর পড়ার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু বাড়ির যা পরিস্থিতি তাতে হয়তো বেশি দূর সম্ভব হবে না। তবু চেষ্টা করছি আইসক্রিম বিক্রি করে যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement