দখল জমি উদ্ধারের চেষ্টা নিয়ে মংপুর সিঙ্কোনা বনে উত্তাপ

বনাঞ্চলের দখল জমি উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে মংপুর সিঙ্কোনা খেত কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১২০০ দখলকারীকে এ ব্যাপারে নোটিস পাঠানো হয়েছে। চলছে সাসপেন্ড, থানায় এফআইআর। ভোটের মুখে এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

মংপু শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৬ ২২:৪৪
Share:

বনাঞ্চলের দখল জমি উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে মংপুর সিঙ্কোনা খেত কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১২০০ দখলকারীকে এ ব্যাপারে নোটিস পাঠানো হয়েছে। চলছে সাসপেন্ড, থানায় এফআইআর। ভোটের মুখে এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

Advertisement

১৮৬৪ সালে তৈরি হয় মংপুর সিঙ্কোনা খেত। এর আওতায় আছে ১০ হাজার একরেরও বেশি জমি। এ ছাড়া ১৯০১ সালে সিকিম ও কালিম্পং-এর সীমানায় মনসংয়ে প্রায় ৯৩৬২ একর জমিতে শুরু হয় ঔষধি গাছ চাষ। ১৯৩৮-এ ভুটানের সীমান্তবর্তী রঙ্গো-র ৪২২২ একরে শুরু হয় ‘ইপিকাক’ চাষ। ১৯৪৩-এ লাট পাঞ্চোরে ২৪৪৬ একর জমিতে প্রাকৃতিক গুল্ম চাষ শুরু হয়। পাহাড়ের কোলে ফাঁকা জমি পেয়ে শতাধিক বছর ধরে একে একে বসে গিয়েছে শ্রমিকদের একাংশ। এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তাঁরা এ নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও বসেন।

মংপুতে গিয়ে দেখা গেল, মোট জমির অনেকাংশই চাষ বহির্ভূত। এ রকম জায়গাগুলিতেই ঘরবাড়ি তৈরির প্রবণতা বেশি। বেশি দখল হয়েছে মংপুর সিঙ্কোনা খেতেই। ‘ডিরেক্টোরেট অব সিঙ্কোনা অ্যান্ড আদার মেডিসিনাল প্লান্ট’-এর অধিকর্তা স্যামুয়েল রাই বলেন, ‘‘কেবল এই জায়গাতেই সহস্রাধিক দখলদারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বেআইনি দখলের দায়ে কয়েক জনকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। এ সব নিয়ে দেখা দিয়েছে কিছু সমস্যা।’’

Advertisement

যত্রতত্র জমি দখলের নেপথ্যে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ জানান বাগানের সাধারণ শ্রমিক-কর্মীরা। এটা অবশ্য মানতে নারাজ মংপুর সিঙ্কোনা খেতের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মিসমিতির সাধারণ সম্পাদক মিরেন লামা। আগে তিনি ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) নেতা। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ পুরুষ ধরে আমরা এই বাগানে আছি। দখলের জন্য আমি উল্টে কর্তৃপক্ষকে দায়ী করব। এত কাল এ ব্যাপারে চোখ বুজে ছিলেন। এখন হঠাৎ ওঁদের চেতনা হয়েছে।’’ জিজেএম-সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক গগন রাইও জবরদখলের নেপথ্যে নেতাদের হাত থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, আইনেই তো বাগান-শ্রমিকদের ঠাঁই দেওয়ার বিধান আছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ গোড়া থেকে সতর্ক থাকলে জটিলতা দেখা দিত না।’’

বাগান-শ্রমিকদের ঠাঁই দেওয়ার বিধানটি কী রকম? অধিকর্তা স্যামুয়েল রাই বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলে বিশেষ ক্ষেত্রে বাগানকর্মীর পরিবার প্রতি ক্ষেত্রে দু’একর করে জমি পেতেন। কমতে কমতে তা দাঁড়িয়েছে আট ডেসিমেলে। আট ডেসিমেলে হয় ৪৩৫ বর্গফুট। কিন্তু যে কেউ প্রভাব খাটিয়ে বাগানে বসতি তৈরি করতে পারে না।’’ এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিক নেতাদের সতর্কতার অভাবের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করতে পারেননি স্যামুয়েল রাই। তিনি বলেন, ‘‘নানা সময় অধিকর্তার পদটি ফাঁকা ছিল। আবার, আগে সমতল থেকে আসা পদস্থ আধিকারিকরা সমস্যাটিতে গুরুত্ব দেননি। গোড়া থেকে এ ব্যাপারে নজর দেওয়া হলে এই জটিলতা হত না।’’ বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই একটি কমিটি তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন রাই।

প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক গোপাল লামা দীর্ঘদিন ভূমি সংস্কারের কাজ দেখাশোনা করতেন। এখন তিনি গোর্খা টেরিটোরিয়াল অথরিটির এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তিনি সম্প্রতি মংপু এসেছিলেন। তিনি জানান, ‘‘সমস্যাটা পুরনো। নানা স্তরে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেখছি, কী করা যায়।’’

কেবল দখল নয়, সরকারের কথায় চাষ বহির্ভূত অনেকটা জমি দু’দফায় বরাদ্দ হয়েছে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনকে। প্রায় তিন দশক ধরে মংপুতে বৈজ্ঞানিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মহম্মদ ফজলুল করিম। স্থানীয় স্টেডিয়ামের পাশে একটা অংশ দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই জায়গায় সিঙ্কোনা চাষ হত। স্টেডিয়ামের আসন তৈরি হবে বলে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। তার পরে প্রকল্পের টাকা ফুরিয়ে গেল। বসার বাঁধানো আসন আর হল না। মাঝখান থেকে গাছগুলো গেল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement