বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্য়ায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলঙ্কিত নায়ক-নায়িকা বলে আক্রমণ করলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। শনিবার গভীর রাতে বৈশাখীর ফেসবুক একাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৫৪ মিনিটের কিছু বেশি সময়ের এই ফেসবুক লাইভে একাধিক অভিযোগ করা রত্নার বিরুদ্ধে। শোভন-বৈশাখীর করা অভিযোগের বিরুদ্ধে বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘আমি ওঁদের ভিডিওটা পুরো দেখিনি। দু’জন হতাশ মহিলা পুরুষ এক জায়গায় হয়ে তাদের জীবনের সব হারিয়েছে। আমাকে শেষ করতে চেয়েছিল লন্ডনে পাঠিয়ে। আমাকে সেখান থেকে আসতে না দিয়ে ইডি-র হাতে গ্রেফতার করানোর চেষ্টা হয়েছিল। আমার বাবার চেষ্টায় আমি বেঁচে গিয়েছি। তারপরেও বিভিন্ন রকমভাবে আমাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। মমতাদিকেও ভুল বুঝিয়েছিল। আমাকে শেষ করতে চেয়েছিল ওরা।’’ এরপরেই তিনি বলেছেন, ‘‘একজনের কলেজের চাকরি গিয়েছে। অন্যজনের সবকিছু চলে গিয়েছে। যখন দেখছে আমরা কোনও খবরে নেই, খবরে আসতে হবে তো। তাই রত্না ও তাঁর ছেলেমেয়েকে সামনে এনে কুৎসা করা শুরু হল। বাংলার মানুষ সব বোঝে, রাতে হঠাৎ করে একজন রিপোর্টার হয়ে গেলেন। আর অন্যজন সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। ওরা তো কলঙ্কিত নায়ক নায়িকা। নিজেদের নোংরা ঢাকতে আমার নামে মিথ্যে রটাচ্ছে ওরা। বেহালা পূর্বের মানুষ আমাকে দেখেই ৩৮ হাজার ভোটে জয়ী করেছেন। গায়ে কোনও নোংরা থাকলে দল আমাকে প্রার্থীও করত না। আর মানুষের আর্শীবাদও পেতাম না।’’ শোভন-বৈশাখীর এমন ফেসবুক সাক্ষাৎকারে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে, নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে শলা পরামর্শ করছেন বলেও জানিয়েছেন রত্না।
১৭ মে পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। সেই সময় স্ত্রী রত্না ও পুত্র ঋষি নিজাম প্যালেসে হাজির হয়ে তাঁকে আইনগত সাহায্য দিতে চান। রত্নার দাবি, সেই সময় পিতাপুত্রের সম্পর্কে শীতলতা এসেছিল। তিনি বলেছেন, ‘‘বলা হয়েছে আমার ছেলে নাকি বাবার সঙ্গে রুড ব্যবহার করেছে। এটা ঠিক যে আমি ঋষিকে বলেছিলাম, বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসতে। কারণ ছেলেমেয়ে তাঁর বাবাকে মিস করেন। তাই বলেছিলাম।’’ বেহালা পূর্বের বিধায়ক আরও বলেছেন, ‘‘দু’দিন বাবার সঙ্গে ছেলের দেখা হয়েছিল। দু’জনের সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু ওই মহিলা যেই বুঝল যে শোভনের সঙ্গে ঋষির সম্পর্ক ভালো হয়ে যাচ্ছে তাহলে তো শোভন বেরিয়ে যাওয়া সুযোগ রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঝগড়া লাগিয়ে, আকারণে সুপারকে চিঠি লিখে ছেলেমেয়ের বাবার সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিল। আমি কখনও ওখানে যেতে যাইনি। বলা হল আমরা নাকি দরজা ভেঙে ঢুকতে গিয়েছিলাম। এত মিথ্যে কথা কীভাবে একজন বলতে পারেন?’’
শোভন-বৈশাখীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন রত্না। তিনি বলেছেন, ‘‘ এখন তো ওরা কোন দলে আছেন কেউ জানে না। ভোটের আগে বিজেপি-র মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোভন অপমান করেছেন বলে দাবি করেছেন রত্না। তিনি বলেন, ‘‘মমতাদি ও অভিষেকে ওরা যেভাবে আক্রমণ করেছেন তা মুখে বলে প্রকাশ করা যায় না। অভিষেককে কয়লা চোর, বালি চোর, গরু চোর বলে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছে। সোনার গোপাল বলে আক্রমণ করা হয়েছে। মমতাদিকে সৎ মা বলে আক্রমণ করেছে ওরা। এখন কোথাও জায়গা না পেয়ে আবারও দিদির কাছে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন আর তা করে লাভ নেই।’’