ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় দেড় যুগ আগে ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল কলকাতায়। সরকারি হিসেবে মহানগরীতে এখন ১৫ বছরের পুরনো গাড়ির সংখ্যা তিন লক্ষের বেশি। তাই আবার ওই ধরনের বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। প্রথম দফায় ১০ হাজার গাড়ির মালিকদের নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। সেই সব বাণিজ্যিক গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে দফতর সূত্রের খবর।
পরিবহণকর্তারা জানাচ্ছেন, ২০০২ সালে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি চলাচল বাতিলের কর্মসূচি চলাকালে কিছু গাড়ি তুলে নেওয়া হয় এবং বেশ কিছু গাড়ি কলকাতার বাইরে বা ভিন্ রাজ্যে চলে যায়। কিন্তু পরিবহণ দফতরের নথিতে সেই সব গাড়ির হিসেব নেই। এখন নতুন করে পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২০০২-এর গাড়িও কাগজে-কলমে পরিবহণ দফতরের খাতায় নথিভুক্ত রয়েছে। এক পরিবহণকর্তা জানান, সেই সব পুরনো গাড়ি হাজির করতে বলা হয়েছে। না-পারলে নথি থেকেই সেগুলো উড়িয়ে দেওয়া হবে।
সরকার হঠাৎ নড়ে বসল কেন?
পরিবহণ দফতরের খবর, কলকাতায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই আদেশের ভিত্তিতে একটি নির্দেশ রয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতেরও। ২০১৮-য় পরিবহণ দফতর এই বিষয়ে একটি আদেশনামা জারি করেছিল। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয়নি। ইদানীং পরিবেশ আদালতে বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে। কেন্দ্রও কলকাতার দূষণ কমাতে পুরনো গাড়ি বাতিল করতে বলেছে। দূষণের নিরিখে বিপজ্জনক সি-৪০ শহরগুলির মধ্যে আছে কলকাতা। ফলে পুরনো গাড়ি বাতিল করা ছাড়া উপায় নেই। ‘‘কলকাতার দূষণ কমাতে কিছু ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। বলবৎ করা হবে পরিবেশ আদালতের নির্দেশও,’’ বলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
সরকারি নথি বলছে, বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার বহু বাস, পুলিশের অসংখ্য গাড়ি, হলুদ ট্যাক্সি, কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল সাফাইয়ের অনেক গাড়ির বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এবং শহরের দূষণের জন্য সেই সব গাড়িও বহুলাংশে দায়ী। সেগুলিও কি বাতিল করা হবে?
পরিবহণ ভবন সূত্রের খবর, তিন লক্ষ পুরনো গাড়ির নাম নথিভুক্ত থাকলেও আসলে কত গাড়ি রয়েছে, তা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব গাড়িই বাতিল করা হবে। সেই কারণে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার গাড়ির মালিককে নোটিস দিয়ে ডাকা হয়েছে। বাণিজ্যিক গাড়িকে বছরে দু’বার ফিটনেস সার্টিফিকেট (সিএফ) নিতে পরিবহণ দফতরে আসতে হয়। ঠিক হয়েছে, ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ির সিএফ আর দেওয়া হবে না। ফলে সেগুলো কলকাতায় চালানো যাবে না। যদি সংশ্লিষ্ট মালিক নতুন গাড়ি নিয়ে আসেন, তা হলে নতুন পারমিট দেওয়া হবে। পুরনো গাড়ির পারমিট ধাপে ধাপে বাতিল করে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণকর্তারা।
‘ভারত স্টেজ থ্রি’ বা ভারত-তিন মাত্রার কোনও বাণিজ্যিক গাড়ি কলকাতায় সাত দিনের বেশি যাতে না-থাকে, সেই জন্য মহানগরের প্রবেশদ্বারে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরায় ধরা পড়লে ওই সব গাড়িকেও কলকাতায় থাকতে দেওয়া হবে না। পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ির সব তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুরনো গাড়ি ধরা পড়লে লাইসেন্স আটকে দিতে পারবে পুলিশও। কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতায় দূষণ কমাতে পুরনো গাড়ি বাতিলের উদ্যোগ চলছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরনো গাড়ি মহানগরীর আশেপাশে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কলকাতায় নথিভুক্ত না-থাকলেও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে সেই সব গাড়ি কলকাতায় চলে আসে। ওই সমস্যার সমাধানে এখনও কিছু ভাবা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন ওই কর্তারা।