বাস ধরার অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইন।—ছবি পিটিআই।
সরকারের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় শেষমেশ বেসরকারি বাস অধিগ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু বুধবার বাস-দুর্ভোগে যথারীতি ভুগল শহর।
জট কাটাতে বাসমালিক সংগঠনের সঙ্গে এ দিন ফের বৈঠকে বসেন পরিবহণ কর্তারা। আজ, বৃহস্পতিবার মালিক সংগঠনগুলিকে তাদের দাবি বা প্রস্তাব আবার লিখিত আকারে পরিবহণ দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে। বুধবারের তুলনায় আজ বৃহস্পতিবার বাসের সংখ্যা কিছুটা বাড়বে বলেও দাবি সংগঠনগুলির।
বাসমালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানান, তাঁরা ভেবেছিলেন, ভাড়া বৃদ্ধি-সহ অন্যান্য দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে গেল। তবে পরিবহণ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আবার আশার আলো দেখছেন মালিকদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ‘‘আলোচনাও চলবে, পরিষেবাও চলবে।’’ তিনটি মালিক সংগঠনই চাইছে, আলোচনা থেকেই স্থায়ী সমাধান বেরিয়ে আসুক। সরকারের সঙ্গে ফের আলোচনার পথ খুলে যাওয়ায় কি আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বাসের সংখ্যা বাড়বে? বুধবার রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করায় ভিড় কিছুটা কম ছিল, কিন্তু আজ? কত বাস-মিনিবাস পথে নামানো হবে, মালিক সংগঠনগুলির তরফে নির্দিষ্ট ভাবে তা কিন্তু বলা হয়নি।
আজও যদি পর্যাপ্ত বাস-মিনিবাস না নামানো হয়, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো ৩ জুলাই থেকে বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ শুরু করবে সরকার? রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, ফের বৈঠক ও প্রস্তাব জমা দিতে বলে মালিক সংগঠনগুলিকে বোঝানো হল, আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। পরবর্তী অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসমালিকদের একাংশের দাবি, বুধবার থেকে মেট্রো চালু না হওয়ায়, সংঘাতে যেতে চাইছে না রাজ্য। বরং আরও কিছুটা সময় দিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
আরও পড়ুন: বাড়িতেই ফ্রিজারে রইল করোনা আক্রান্তের দেহ
তবে যাত্রীদের যত দুর্ভোগই হোক, বাস নামানোর জন্য মালিকের উপরে চাপ তৈরি করতে এখনও নারাজ সংগঠনের নেতারা। ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই পরিষেবা দিচ্ছি। এখনও যে যেমন পারবেন বাস চালাবেন।’’ চাপ তৈরিতে নারাজ অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতিও। সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠনের তরফে বাসমালিকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আলোচনা যখন চলছে, তখন আশা করি অন্তর্বর্তী বা স্থায়ী সমাধান বেরবে।’’
পরিবহণ সচিব প্রভাত মিশ্র এবং অন্য কর্তাদের সঙ্গে এ দিনের আলোচনায় বাসমালিক সংগঠনগুলি ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তোলার পাশাপাশি পুলিশি জরিমানা বন্ধ, পারমিট ফি, কর মকুব, ঋণের কিস্তি, বিমার টাকা মকুবের মতো বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। এই সমস্ত বিষয় সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই বাস নামানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানান জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার কেরলে বেসরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেন সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সভাপতি টিটো সাহা।
আরও পড়ুন: রেশন-সংঘর্ষে ৭ নেতার নামে মামলা ইডি-র
এ দিনও উত্তর শহরতলির অনেক রুটেই বাস চলেনি। সরকারি বাস চললেও, বেসরকারি বাসের অভাবে ভুগতে হয়েছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের যাত্রীদের। নাগেরবাজারে এ দিন থালা হাতে বিক্ষোভ দেখান বাস চালক ও কন্ডাক্টরেরা। আবার অভিযোগ, উঠেছে ২২১ রুটের বাসচালক বিশ্বজিৎ বড়াল (২৬) আর্থিক অনটনে গত রবিবার আত্মঘাতী হয়েছেন।
বাস পরিষেবা নিয়ে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। ভাড়া স্থির করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরির জন্য তিনি আদালতে আবেদন করেছেন।