হাতেকলমে: চলছে তালিমের তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র
র্যাম্পে মেয়ে বা পুরুষ মডেলদের পাশে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইটা আগেই শুরু হয়েছে। এ বার পোশাক-গয়না তৈরি শিখে স্বপ্নপূরণের আশা।
এ দেশের রূপান্তরকামীদের জীবনে অনন্ত আঁধার ফিকে হওয়ার আশাটুকু তাতেই স্পষ্ট হচ্ছে। ফ্যাশন ডিজ়াইনার হয়ে নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখছেন শ্রেয়া, অনুরাধা, রিদম, বৈশালীর মতো কয়েক জন।
অথচ, এতটা দুঃসাহস কল্পনার বাইরে ছিল। বিহারে ‘লন্ডা নাচ’-এর দলে নাম লেখানো, ভিক্ষা করা বা যৌনকর্মীর জীবনটাই ভবিতব্য বলে কার্যত মেনে নিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই। এমনই পাঁচ রূপান্তরকামী মেয়েকে এ শহরে এক বহুজাতিক সেলাইকল সংস্থার তরফে তালিম দেওয়া হচ্ছে। কাজ শেখানোর পরে এগিয়ে চলার হাতিয়ার সেলাইকলটিও দেওয়া হবে তাঁদের।
বছর তিনেক আগে এ রাজ্যে রূপান্তরকামী তথা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের জন্য ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গড়ে উঠেছিল। তখন কোনও পেশায় রূপান্তরকামীদের ক্ষমতায়নের আশাও দানা বাঁধে। পরে তাঁদের হাতে তৈরি জিনিসের বিপণন ও প্রদর্শনীতেও সাহায্য করতে আগ্রহী হয় বোর্ড। এমনকি, পঞ্চায়েত স্তরে রূপান্তরকামীদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির প্রস্তাবও গৃহীত হয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়েও বৈষম্য দূর করে তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত বা রূপান্তরকামীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাতেও খামতি রয়েছে।
তবে এ রাজ্যে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পাল্টাচ্ছে। যেমন, লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে রূপান্তরকামী নারী জয়িতাকে। জিয়া দাস অস্ত্রোপচারকক্ষে টেকনিশিয়ান হিসেবে তালিম নিচ্ছেন। নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের তত্ত্বাবধানে রূপান্তরকামীদের নাচের দল গড়ে উঠেছে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে উদ্যোগটির নেপথ্যে রয়েছেন রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহ। ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য রঞ্জিতা বলছিলেন, ‘‘রূপান্তরকামীদের কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর প্রকল্প গড়ার ইচ্ছে অনেক দিনের।’’ ওই সেলাইকল সংস্থার পূর্ব ভারতীয় কর্তা ললিত দেউয়ের কথায়, ‘‘সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই রূপান্তরকামীদের এই প্রকল্পে নেওয়া হচ্ছে।’’ প্রশিক্ষক রাখী অধিকারী মেশিন বাছাই করেছেন। বলছেন, ‘‘মেশিনেই পোশাকের বিভিন্ন নকশা থাকে। রূপান্তরকামীদের কাজ শিখিয়ে বুটিক বা অন্যত্র কাজের সুযোগ তৈরি করা হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীও তৈরি হতে পারে।’’ মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক অলঙ্কারশিল্পী গয়না তৈরিও শেখাবেন। ‘কারিগরি’ নামে ব্র্যান্ড তৈরি করে রূপান্তরকামীদের তৈরি পোশাক বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে।
পানশালায় নাচতে অভ্যস্ত রূপান্তরকামী মেয়ে শ্রেয়া কর্মকার বলছিলেন, ‘‘আমি ছোট থেকেই পোশাক তৈরি করি। নতুন কাজ শেখার জন্য মুখিয়ে আছি।’’ আর রাজা রায় ওরফে রিদমের কথায়, ‘‘মেয়েলি হাবভাবের জন্য বাড়িতেও অপমানের শিকার হয়েছি। আশায় আছি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচব।’’ রূপান্তরকামীদের এই ডানা মেলার পালার সূচনা হচ্ছে বুধবার, স্বাধীনতা দিবসে।