রক্ষাকবচে ভেজাল! তবু ছুটছে রেল

নাম তার ‘মেটাল লাইনার’। রেলে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কাজের বিচারে সে ট্র্যাক বা লাইনের রক্ষাকবচ। আর সেই রক্ষাকবচেই ভেজাল। মেটাল লাইনার নির্মাতা সংস্থার ব্যাপক দুর্নীতির জেরে প্রশ্নের মুখে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপদের মুখে যাত্রীদের জানপ্রাণ। আর সেই দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে কলকাতার। কেননা ওই নির্মাতা সংস্থা এই মহানগরেরই।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

নাম তার ‘মেটাল লাইনার’। রেলে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কাজের বিচারে সে ট্র্যাক বা লাইনের রক্ষাকবচ। আর সেই রক্ষাকবচেই ভেজাল। মেটাল লাইনার নির্মাতা সংস্থার ব্যাপক দুর্নীতির জেরে প্রশ্নের মুখে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপদের মুখে যাত্রীদের জানপ্রাণ। আর সেই দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে কলকাতার। কেননা ওই নির্মাতা সংস্থা এই মহানগরেরই।

Advertisement

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, লাইনের সংযোগস্থলে মেটাল লাইনার বসানো হয় প্যান্ড্রোল ক্লিপের ঠিক নীচে। অভিযোগ, কোঙ্কন রেলওয়ের মাড়গাঁও ও রত্নগিরি অঞ্চলের লাইনে যে-সব ‘মেটাল লাইনার’ ব্যবহার করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। যার জেরে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বেলাইন হতে পারে ট্রেন। সিগন্যালিংয়ের ক্ষেত্রেও এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ লাইনার সমস্যার কারণ হতে পারে।

২০১১ সালের শেষ দিকে মেটাল লাইনারের জন্য দরপত্র ডাকে কোঙ্কন রেল। বরাত পায় শ্রী লক্ষ্মী আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস নামে কলকাতার একটি সংস্থা। প্রায় তিন কোটি টাকার দরপত্রের ভিত্তিতে নমুনা তৈরি করে তারা। নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া রাইটসকে। অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডায়মেনশন টেস্টের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না-করেই সংস্থাটিকে শংসাপত্র দিয়ে দেন। অভিযুক্ত প্রদীপরঞ্জন সরকারকে পরে সাসপেন্ড করেছে রাইটস।

Advertisement

শংসাপত্র পেয়ে ঢালাও লাইনার তৈরি করতে শুরু করে অভিযুক্ত সংস্থাটি। এবং তা রেলকে বিক্রিও করা হয়। ২০১২ সালে গরমিলের বিষয়টি চোখে পড়ে রেল মন্ত্রকের অধীন ‘দ্য রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন’ বা আরডিএসও-র। দ্রুত তারা শ্রী লক্ষ্মী সংস্থাটিকে লাইনার উৎপাদন বন্ধ করতে বলে। ওই সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে এবং স্থগিতাদেশ পায়। ২০১৬ সালে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলাটি নতুন করে শুরু হয়। কোঙ্কন রেলের আইনজীবী দীপাঞ্জন দত্ত জানান, প্রথমে বিষয়টি সম্বন্ধে কোনও তথ্যই ছিল না রেলের কাছে। ফলে ত্রুটিযুক্ত লাইনারই বসানো হয়েছে ওই লাইনে।

কোঙ্কন রেলের পরিসংখ্যান বলছে, ১৮ লক্ষ ন’হাজার ৪৭২টি বাতিল মেটাল লাইনার পড়ে আছে। যার দাম ৪৪ লক্ষ টাকা। প্রায় তিন কোটি টাকার প্রকল্পে বাকি ত্রুটিপূর্ণ লাইনার ব্যবহৃত হয়ে গিয়েছে।

আদালতও লাইনার পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। তাতেও ত্রুটি ধরা পড়ে। ২০১৬ সালে রায় দিতে গিয়ে সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাত্রীদের প্রাণ কেড়ে নেওয়া বা লাইনচ্যুত হওয়ার মতো বিপদ ঘটানোর জন্য এমন বহু মেটাল লাইনার হয়তো রেলের বিভিন্ন ডিপোয় অপেক্ষা করছে!’’ পরে মামলাটি যায় ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের বেঞ্চের রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ওই লাইনার উৎপাদক সংস্থার শাস্তি ঘোষিত হয় গত ১৮ মে।

প্রশ্ন উঠছে, যাত্রী-সুরক্ষার কী হবে? কোঙ্কন রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ লাইনার এখনও লাইনেই আছে। তবে সেগুলি মূলত লুপ লাইন এবং ক্রসিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। লাইনারগুলি বদলে ফেলা হবে। কিন্তু কবে? উত্তর নেই। ত্রুটি ধরা পড়ার পরেই লাইনার বদলানো হল না কেন? উত্তর নেই। কথা বলতে চায়নি আরডিএসও। রাইটসের বক্তব্য, সাধারণত এই ধরনের দুর্নীতি দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ধরা পড়ায় অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

বারবার ফোন করেও অভিযুক্ত সংস্থার বক্তব্য জানা যায়নি। রেলের খবর, মূলত রেলের সামগ্রী উৎপাদনকারী ওই সংস্থা ফের বরাত পাওয়ার জন্য বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement