চলছে প্রশিক্ষণ শিবির। নিজস্ব চিত্র
আমার মেয়ে চাষ জানে। চাষের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি জানে। বিকল্প চাষও জানে। পুরুলিয়ার কন্যাশ্রীদের এ ধাঁচেই গড়ে তুলতে চাইছে জেলা প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে আয়োজিত চার দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হল শনিবার। পুরুলিয়া ২ ব্লকের জাহাজপুর কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞানকেন্দ্রে পাঁচটি ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের ৪৪ জন ‘কন্যাশ্রী বড়দি’কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে বিজ্ঞানসম্মত চাষের পদ্ধতি ও প্রাণিপালনের প্রাথমিক পাঠ।
পুরুলিয়া জেলায় ২৭৪টি ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’ রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে বাছাই করা হয়েছে এক জন করে ‘কন্যাশ্রী বড়দি’। দেওয়া হয়েছে ব্যাজ। তাতে লেখা— ‘আমার মেয়ে সব জানে’। ওই ব্যাজ পরে স্কুলে যায় ‘বড়দি’রা। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, তাঁদের মেয়েরা যে সব জানে সেই বিশ্বাস বাবা-মায়েদের মনে বদ্ধমূল করতে চাইছে প্রশাসন। আশা করা হচ্ছে, তা থেকেই কন্যাসন্তানের ব্যাপারে সমাজের ভাবনা বদলাবে।
এই ভাবনা থেকেই আরও একটি পদক্ষেপ কৃষি প্রশিক্ষণ শিবির। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বড়দিরা এখান থেকে চাষবাস সম্পর্কে যা শিখল, তা অন্যদের জানাবে। কৃষকদের মধ্যে আধুনিক ধারণা যদি ওদের মাধ্যমে পৌঁছয়, সেটাই চাওয়া হচ্ছে।’’ স্কুলের জমিতে বাগান তৈরির ব্যাপারেও ‘কন্যাশ্রী বড়দি’রা নেতৃত্ব দেবে। শিবির থেকে যা শিখল, তা স্কুলে বা এলাকায় কী ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে সে ব্যাপারে একটি রিপোর্ট তৈরি করে তাদের জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট জেলাশাসকদের দফতর হয়ে চলে যাবে তাদের নিজের স্কুলে। প্রধানশিক্ষক বা শিক্ষিকা তা রূপায়ণে সাহায্য করবেন। পুরুলিয়ার কৃষি বিজ্ঞানকেন্দ্রের বিজ্ঞানী মানসকুমার ভট্টাচার্য জানান, কৃষি, উদ্যানপালন, প্রাণিসম্পদ বিকাশ-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মানসবাবু জানান, শিবিরে মেয়েদের বোঝানো হয়েছে, প্রোটিন-সমৃদ্ধ ডাল শস্যের চাষে কী লাভ। কোন মৌল মাটিকে উর্বর করে, মাটি পরীক্ষা কোথায় হয়। কেন্দ্রের আর এক বিজ্ঞানী অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও স্কুলে যদি সাতশো ছাত্রছাত্রী থাকে, মিড-ডে মিল খাওয়ার আগে-পরে হাত-ধোয়ার জল দিয়েই আনাজপাতি ফলানো যায়। সেটাও শেখানো হয়েছে ওদের।’’
শিবিরে যোগ দিয়েছিল ‘কন্যাশ্রী বড়দি’ সুমনা চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চেল, কাকলি মাহাতো, সুস্মিতা বাউড়িরা। তারা বলে, ‘‘স্কুলের অনেকেরই পরিবারের পেশা চাষআবাদ। এই ব্যাপারগুলো মেয়েদের জানা থাকলে সুবিধা হতে পারে।’’ এক সময় নাবালিকা বিয়ে যে জেলায় নিত্যদিনের ঘটনা ছিল, সেখানে চাষের কাজে মেয়েদের কতটা গুরুত্ব দেবেন বাবা-কাকারা? পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার শিক্ষিকা চন্দ্রাণী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কাজটা কঠিন। কিন্তু কয়েকজনও যদি বাবা-কাকাদের বিকল্প ভাবনা ভাবাতে পারে—সেটাই বড় প্রাপ্তি।’’