শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলছে বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবারও শিয়ালদহ মেন ও উত্তর শাখায় স্বাভাবিক হল না ট্রেন পরিষেবা। তবে শুক্র, শনি বা রবিবারের মতো বিপর্যস্ত অবস্থা নয়। প্রায় সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অন্তত আধ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। কোনও কোনও লোকাল ট্রেন ঘণ্টাখানেকেরও বেশি ‘লেট’। যার ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ট্রেনে ভিড়ও রয়েছে প্রচুর। দেরি করে চলায় ট্রেনে ভিড় আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। কারণ, দেরি করে আসা ট্রেনে আগের ট্রেনগুলির যাত্রীরাও উঠছেন। ফলে চাপ হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। কোনও কোনও ট্রেন দেড় ঘণ্টা দেরিতেও চলছে বলে অভিযোগ।
শিয়ালদহ স্টেশনে গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। রেল জানিয়েছিল, এর ফলে বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ শুরু হবে দমদম জংশন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বারাসত এবং কল্যাণীতে। বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হলেও এই কাজের জন্য যে যাত্রীদুর্ভোগ হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা রেলের তরফে কখনও জানানো হয়নি। কাজ শুরু হওয়ার পর শুক্রবার সকাল থেকেই বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। ভিড়ের কারণে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে এক যাত্রীর মৃত্যুও হয় ওই দিন। শনিবার যাত্রীদুর্ভোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনও দমদমের ইয়ার্ডে ঘণ্টা তিনেক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। লোকাল ট্রেনের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। রবিবার সকালে বিক্ষুব্ধ রেলযাত্রীদের বিরুদ্ধে শিয়ালদহ স্টেশনে ভাঙচুর করার অভিযোগও ওঠে। এর পর রবিবার বেলার দিকে রেল জানায়, শিয়ালদহ স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দু’ঘণ্টা আগেই কাজ শেষ হয়েছে বলে জানায় তারা। রেলের দাবি, রবিবার বেলা ১২টার পর থেকেই ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে শিয়ালদহ লাইনে। তবে ‘আত্মনির্ভর শিয়ালদহে’ সোমবারও যাত্রীদের ভোগান্তির ছবি দেখা গেল।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সোমবারও ছবিটা খুব একটা বদলায়নি। শিয়ালদহ লাইনে ভিড়ে বিপর্যস্ত যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ট্রেন চলায় অনেকে পরের ট্রেন ধরতে এসে আগের ট্রেন পেয়ে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে সেই ট্রেনেই উঠতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। রেলের পরিষেবা নিয়ে সোমবারও তাঁরা বিরক্ত এবং বিধ্বস্ত। বনগাঁ থেকে শিয়ালদহে আসবেন বলে ট্রেনে উঠেছিলেন চাঁপাবেড়িয়ার বাসিন্দা শঙ্কর সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমি যে ট্রেন ধরেছিলাম, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তা আরও আগে আসার কথা ছিল। আমি পরের ট্রেন ধরতে এসে আগেরটা পেয়েছি। সাড়ে ১২টায় সেই ট্রেনটি দমদমে ঢোকার কথা। দেড়টাতেও দমদম পৌঁছতে পারিনি।’’
সোমবারের পরিস্থিতি নিয়ে রেলের বক্তব্য, যে হেতু শিয়ালদহে সদ্য প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে ট্রেন ঢোকা-বেরোনোয় সময় লাগছে। কোনও ট্রেন সোমবার বাতিল করা হয়নি। সব ট্রেনই চলছে। শিয়ালদহে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টারলকিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরনো পদ্ধতি ননইন্টারলকিং করে। পরিষেবা পুরো স্বাভাবিক হতে আরও একটু সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার থেকে শিয়ালদহ শাখায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। একসঙ্গে অনেক ট্রেন বাতিল হওয়ায় নিত্যযাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। হাতেগোনা যে ক’টি ট্রেন চলেছে, তাতে উপচে পড়েছে ভিড়। সেই ভিড় ট্রেনেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দরজায় ঝুলতে ঝুলতে যাতায়াত করেছেন অনেকে। সঠিক সময়ে স্কুল, কলেজ, অফিসে পৌঁছতে পারেননি নিত্যযাত্রীরা। রবিবার কাজ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকালেও সঠিক সময়েই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন ঢুকছিল। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, বেলা বাড়তেই ট্রেনের সময় ঘেঁটে যায়। সময়ে ট্রেন আসেনি। ফলে স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে। রবিবার রাতেও বহু যাত্রীকে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ।
সোমবার রেলের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, শিয়ালদহ স্টেশনে দীর্ঘ দিন ধরে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের যে কাজ আটকে ছিল, তা সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে যাত্রীদের যাতায়াতে আরও সুবিধা হবে। গত তিন দিন ধরে রেলের কর্মচারীরা এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য দিনরাত এক করে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সোমবার সকাল থেকে ট্রেন পরিষেবা শিয়ালদহ শাখায় একেবারে স্বাভাবিক বলে দাবি করেছে রেল। এ বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের হিসাবে কোনও ট্রেন দেরিতে চলছে না। সব ট্রেন স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী চলছে।’’