সমাগম: সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পর্যটকদের বাস। নিজস্ব চিত্র
পুজোর ছুটিতে সরগরম মুকুটমণিপুর।
বাঁকুড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটনস্থলে সরাসরি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১৫টি লজ ও হোটেল রয়েছে। ‘মুকুটমণিপুর হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি সুদীপ সাহু এবং সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত জানাচ্ছেন, পুজোর আগে থেকেই লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত টানা বুকিং হয়ে রয়েছে। অনেক হোটেলে আবার কালীপুজো পর্যন্ত।
মুকুটমণিপুরের একটি সরকারি লজের কর্মী নিতাই বাউড়ি বলছিলেন, ‘‘বুধবারও অনেকে স্পট বুকিং করে থাকার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁদের থাকার জায়গা দিতে পারিনি। লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত কোনও ঘর ফাঁকা নেই।’’
শীত পড়তে এখনও অনেকটা বাকি। জলাধারের ভিড়-থিকথিকে ছবিটা আসতে আরও বেশ কিছু দিনের অপেক্ষা। তার আগে পুজোর দিনগুলিতে নজরকাড়া ভিড় ছিল মুকুটমণিপুরে। বুধবার সকাল থেকে সেই ভিড় আরও বাড়তে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। খুশি হোটেল, লজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
‘মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক বিপুল সাহু জানান, এ দিনও যথেষ্ট ভিড় হয়েছে। বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো শেষ হতে না হতেই এতটা ভিড়, ভাবা যায় না।’’ খাতড়া-মুকুটমণিপুর রাস্তার টোল গেটের কর্মী তপেন্দু সাহু জানান, ওই রাস্তায় এ দিন প্রায় ৫৫ থেকে ৬০টি বাস, ৮০ থেকে ৯০টি ছোট গাড়ি এসেছে। আকখুঁটা মোড় থেকে অম্বিকানগর রুটেও বেশ কিছু বাস ও ছোট গাড়ি ঢুকেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজারের মতো পর্যটকের ভিড় ছিল।
হাওড়ার শিবতলা থেকে বছর পাঁচেকের ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় ও সুজাতা চট্টোপাধ্যায়। যুবকল্যাণ দফতরের আবাসনের পাশে দাঁড়িয়ে জয়দীপবাবু বলছিলেন, ‘‘বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম, পুজোয় নাকি এখানে খুব ভিড় থাকে । তাই পুজো শেষ হতেই এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, পুজোর পরে হোটেল ফাঁকা থাকবে।’’ হয়েছে উল্টোটা। কোথায় থাকা যায়, সেই চিন্তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে ওই দম্পতির।
হুগলির পান্ডুয়া থেকে এ দিন এসেছিলেন শুকলাল মান্ডি, সুশীল মান্ডি, লতিকা মান্ডিরা। হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে এসেছিলেন মহেশ্বর হাঁসদা, জিতেন কিস্কুরা। শুকলাল ও সুশীল মান্ডি বলেন, ‘‘এই নিয়ে তিন বার এলাম। এ দিন এখানে পিকনিক সেরে পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের শিলদার অড়গঁদায় আদিবাসী মেলায় যাব। প্রায় প্রতি বছরই ওই মেলায় যাই।’’
হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান থেকে আসা আদিবাসীরা মেলায় যাওয়ার আগে অনেকেই মুকুটমণিপুরে পিকনিক সেরে তার পরে রওনা হন। তাতে মুকুটমণিপুর বেড়ানো ও মেলা দেখা— এক সঙ্গে দুটোই হয়ে যায়।