‘ডুয়ার্স কলিং’—এই স্লোগান সামনে রেখে নতুন প্রকল্প হাতে নিল পর্যটন দফতর এবং জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। আগামী পুজোর মরশুমের আগেই অচেনা কিছু জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র গড়তে গোটা ডুয়ার্সের প্রায় ৩৫টি এলাকাকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটনের এই প্রসাদ বন-বিধি মেনে হচ্ছে তো প্রশ্ন উঠেছে, পরিবেশবিদদের মধ্যে। জেলা প্রশাসনের একটি অংশও, পর্যটনের জন্য যে জায়গাগুলি বাছা হয়েছে সেগুলি বন ও পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।
সরকারি সূত্রের খবর, আগামী বছর ছ’টি নতুন এলাকায় থাকা ও ঘোরার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। মালবাজার মহকুমার টিয়াবন বা মঙ্গলবাড়ি ভিলেজ, ইনডং, সাতখিয়া, বাতাবাড়ি, পশ্চিম ডামডিম এবং তিলাবাড়িতে ওই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ডুয়ার্সের এই মেগা পর্যটন প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “ডুয়ার্সকে পর্যটকদের সামনে নতুন করে তুলে ধরার জন্যই ‘ডুয়ার্স কলিং’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এবার চিরাচরিত ডুয়ার্সের বাইরে নতুন ডুয়ার্সকে পর্যটকেরা উপভোগ করতে পারবেন।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চালসা থেকে গরুমারার পথে পড়বে টিয়াবন বা মঙ্গলবাড়ি ভিলেজ। জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকায় চারটি ঘর, ডরমেটরি, রেঁস্তোরা, ফুডকোর্ট এবং শিশু উদ্যান হচ্ছে। চালসা থেকে মেটেলি যেতে চা বাগান আর সবুজে সাজানো উপত্যকায় হচ্ছে ইনডং প্রকল্পটি। এখানে তৈরি হচ্ছে ছ’টি কটেজ, রেস্তোরাঁ, দুটি ভিউ পয়েন্ট ও ক্যাম্পিং সাইট । এ ছাড়া নদী, চা বাগানকে ঘিরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মালবাজার থেকে চালসা যাওয়ার পথে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সাতখিয়াতে পর্যটকদের জন্য বসার ব্যবস্থা, ক্যাফেটিরিয়া, ফুড কোর্ট ও শৌচালয় তৈরি হচ্ছে।
ডামডিম মোড় থেকে প্রায় ন’কিলোমিটার ভিতরে কুমলাই চা বাগান ও জঙ্গল ঘেরা এলাকায় তৈরি হচ্ছে দশটি কটেজ, ক্যাফেটেরিয়া ও কনফারেন্স রুম। বাতাবাড়ি মোড় থেকে মূর্তি দিকে যাওয়ার রাস্তায় দশটি কটেজ ও বিনোদন পার্ক তৈরি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের মূল গেট লাগোয়া টিলাবাড়ি এলাকায়। সেখানে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, দশটি কটেজ ও রেঁস্তোরা তৈরি করা হচ্ছে। গড়ে তোলা হবে হস্তশিল্প কেন্দ্রও। পর্যটন দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ২০১১ সালের পর পর্যটন দফতর এবং পর্যটন উন্নয়ন নিগমের তরফে ডুয়ার্সে নতুন এলাকা খোঁজার জন্য সমীক্ষার কাজ করানো হয়। সে সময় দেখা যায়, পশ্চিম ডুয়ার্সের এই অংশে একমাত্র মূর্তিতে নিগমের পর্যটক আবাস রয়েছে। বন দফতরের পর্যটক আবাস রয়েছে বনানী, চাপরামারি ক্যাম্প, বিচাডাঙা, কালীপুর, ধূপঝোড়া এবং নেওরা’য় । প্রতি বছর মারাত্মক পর্যটকদের চাপ থাকে এই আবাসগুলিতে। বেসরকারি সংস্থাগুলি লাটাগুড়ি, মূর্তি বা গরুমারা কেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় ডুয়ার্সের নতুন এলাকাগুলিতে প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।